করোনা মহামারি: কাজের গতি কমায় পদ্মা সেতু চালু হতে লাগবে বাড়তি এক বছর
2021.03.10
ঢাকা

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সময় আবারো পেছাল। করোনা মহামারির কারণে কাজ দেরি হওয়ায় সেতুটি চালু হতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক বছর বেশি লাগবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
মহামারিতে চীনা শ্রমিকসহ অন্যরা পুরোদমে প্রকল্পের কাজ করতে না পারায় সেতুর কাজ শেষ করতে বাড়তি সময় লাগলেও প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না বলে বুধবার বেনারকে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।
“পদ্মা সেতুর সড়ক অংশের শতকরা ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে,” জানিয়ে তিনি বলেন “করোনা মহামারির কারণে সামগ্রিক কাজের গতি কমেছে। নদী শাসনের কিছু কাজ বাকি আছে।”
তিনি বলেন, “আশা রাখি সেতুর সড়ক অংশটি ২৩ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে।”
আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেতুটি ২০২২ সালের জুনে উদ্বোধনের পরিকল্পনা ছিল বলে জানান তিনি।
মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান সচিব।
সচিব বলেন, “সেতুটি জনগণের জন্য খুলে দেয়ার আগে কোনো কারিগরি ত্রুটি আছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য এবং কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো মেরামতের জন্য সময় দরকার।”
“এই কাজের জন্য আমরা আইএমইডি’র কাছে এক বছর সময় চেয়েছি। তবে খরচ বাড়বে না,” যোগ করেন তিনি।
‘রাজনৈতিক’ দিকও রয়েছে
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য সরকারের সময় বৃদ্ধি করতে চাওয়ার কারিগরি ও রাজনৈতিক; দুটো দিক রয়েছে বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
“সেতুটি উদ্বোধনের আগে সম্ভাব্য কারিগরি ত্রুটি চিহ্নিত করার জন্য যে এক বছর সময় বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে সেটি গ্রহণযোগ্য,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর “রাজনৈতিক” দিকটি হলো “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন।”
তিনি বলেন, “আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হবে। সেকারণে হয়তো সরকার ২০২৩ সালের জুনে সেতুটি উদ্বোধনের কথা ভাবছে।”
“পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলবে এই সেতু,” জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের ছয় মাস আগে সেতুটি উদ্বোধন করা আর এক বছর আগে উদ্বোধন করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।”
“ভোটের আগে আওয়ামী লীগ জনগণকে দেখাতে চায় যে তারা ওই এলাকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে কাজ করছে,” বলেন অধ্যাপক নিজাম।
“বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি হলো উন্নয়নের রাজনীতি,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তারা পদ্মা সেতু নির্মাণকে একটি বড়ো অর্জন হিসাবে ভোটের রাজনীতিতে ব্যবহার করবে। সেটিতে কোনো সমস্যা দেখি না।”
স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোকে রাজধানী ঢাকার সাথে সরাসরি যুক্ত করতে পদ্মা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণের আলোচনা শুরু হয়।
২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর স্থান নির্বাচন ও প্রাথমিক কিছু কাজ সম্পন্ন করে বিএনপি সরকার।
দ্বিতীয়বারের মতো ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন অংশীদারের সাথে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে।
দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করলে নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে।
নদী শাসনের কাজ দেয়া হয় সিনোহাইড্রোকে এবং মূল সেতু নির্মাণের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে। মূল সেতু নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছে তিন দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।
দোতলা এই সেতুর নিচের স্তরে রেললাইন এবং ওপর স্তরে সড়ক সেতু।
রেল প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য চীনা সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার। রেল প্রকল্পের মোট চার দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচের শতকরা ৮৫ ভাগ আসবে চীনা এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের মাধ্যমে।
পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণ শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বরে।
সেতুর কাজ সম্পন্ন করার সময় কয়েক দফা বৃদ্ধি করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কাজের গতি কমে আসে।
বেড়েছে করোনার প্রকোপ
গত কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারি প্রায় নিয়ন্ত্রণে আসলেও বুধবার দুই মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো এক হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ।
গত বছর ৮ মার্চ থেকে বুধবার পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ১০৫ জন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন আট হাজার ৪৯৬ জন।
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলা করতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার।
বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন তাঁর প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন। সম্প্রতি টিকা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
বুধবার নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ, মঙ্গলবার এই হার ছিল ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ।
এক দিনে শনাক্তের হার সর্বশেষ শতকরা পাঁচ ভাগের বেশি ছিল গত ১৮ জানুয়ারি। এরপর কমতে কমতে তা তিন শতাংশের নিচে নেমে আসে। মার্চের শুরু থেকে তা আবার ক্রমাগত বাড়ছে।