সংসদ নির্বাচন ২০২৪: আইনশৃঙ্খলায় খরচ আগের চেয়ে প্রায় তিন গুণ
2024.01.04
ঢাকা

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় তিনগুণ টাকা খরচ হচ্ছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। অনেকটা একতরফা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এই বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, এবার মোট নির্বাচনী ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি, যার মধ্যে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭০০ কোটি টাকা, যা পরে কিছুটা বেড়েছিল। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর জন্য বরাদ্দ ছিল ৪৩০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই সংসদ নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দু’দিনের সম্মানী ভাতা দেয়া হবে। এছাড়া ভোটার সংখ্যা বাড়ায় সারা দেশে ভোটকেন্দ্র বেড়েছে, খরচও বেড়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
“ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের একদিনের জায়গায় দুই দিনের ভাতা দেওয়া হয়েছে। আরপিও সংশোধন হওয়ায় এবার প্রশিক্ষণ বেশি হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটদের অন্যান্যবার ব্রিফ করা হতো, এবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাই প্রশিক্ষণ খাতে খরচ বেড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা খাতেও খরচ বেড়েছে,” বেনারকে বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “২০১৮ সালে ৭০০ কোটি টাকা বাজেট থাকলেও পরে তা বেড়েছিল। এবারও খরচ বাড়বে ধরে নেওয়া যায়।”
তবে এবার নির্বাচনী মালপত্র কেনায় খরচ কমেছে বলে জানান তিনি।
‘সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন’
আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে বাংলাদেশের “সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন” হিসেবে আখ্যায়িত করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে নামছে সব বাহিনী।”
১৭ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ সময় “নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার” নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা খাতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এত টাকা ব্যয় করে কোনো লাভ হবে বলে মনে করি না। কারণ এখানে তো কোনো প্রতিপক্ষ নেই, যারা মারামারি করবে।”
নির্বাচনের দিন সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “যা হচ্ছে, একটি দলের মধ্যে হচ্ছে। সেটা ঠেকাতে পারবে কি না জানি না। এখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো ভূমিকা তো দেখিনি। নির্বাচনের মাঠে যারা আছে, সবাই একই দলের। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে ব্যবস্থাই নেবে, কথা উঠবে সরকারি দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “নির্বাচন কমিশন তো নিরপেক্ষ নয়। তারা সরকারের দোসর এবং পক্ষপাতদুষ্ট। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন তারা সরকারের স্বার্থে করছে; যদি বিরোধী দল কোনো বাড়াবাড়ি করে সেটি মাথায় রেখে।”
নির্বাচনের পেছনে এত ব্যয় থেকে কোনো ‘ফলাফল’ পাওয়া যাবে কি না সে প্রশ্ন থেকে যায় বলে জানান তিনি।
“যদি যথাযথ ফল পাওয়া না যায়, তাহলে এই টাকাটা পুরোপুরি অপচয়। এখানে তো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হচ্ছে না। অনেকটা এক দলের মধ্যে নির্বাচন,” বলেন তিনি।
তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “বাড়তি টিএ-ডিএ এবং দিন বাড়ার কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জন্য বরাদ্দ ও নির্বাচনের ব্যয় বাড়তে পারে। এই খরচকে অযৌক্তিক বলার অবকাশ নেই।”
উল্লেখ্য, বিরোধী দল ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মোট ব্যয় ছিল প্রায় ২৬৪ কোটি টাকা। সেবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পেছনে ব্যয় হয় ২০০ কোটি টাকা।
মাঠে থাকবে আট লাখ সদস্য
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর আট লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে দায়িত্বে ছিলেন ছয় লাখ সদস্য।
ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবির সদস্য। সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার কথা বলা হলেও সুনির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। বিজিবির ৪৬ হাজার ৮৭৬ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া র্যাব ও পুলিশের ১ লাখ ৮২ হাজার সদস্য মাঠে থাকবে। আনসার সদস্য থাকবে ৫ লাখ ১৬ হাজার, বাকিরা অন্যান্য বাহিনীর।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবে। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধক্রমে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে বাহিনীগুলো এলাকাভিত্তিক মোতায়েন সম্পন্ন করছে।
এছাড়া পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ড সদস্যরা নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন।