শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভায় ডাক পেলেন ৩৬ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী
2024.01.10
ঢাকা

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী ৬২ জন স্বতন্ত্র সদস্যকে সংসদীয় বিরোধী দলের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে এমন আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বর্জন করায় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই বুধবার সকালে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন।
এদিন সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়ার জন্য ৩৬ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সর্বশেষ মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৫। ওই মন্ত্রিসভা থেকে পররাষ্ট্র, কৃষি, অর্থ, পরিকল্পনা, খাদ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৫ মন্ত্রী ও ১৩ প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়েছেন।
সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী, নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। তবে শপথ অনুষ্ঠানের আগে এই ৩৬ জনের তালিকায় আরও কিছু নাম যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে ১২ নতুন মুখ ও সাতজন নতুন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।
বুধবারের ঘোষণা অনুযায়ী, গত মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না।
এছাড়াও বাদ পড়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসাও থাকছেন না নতুন সরকারে।
স্বতন্ত্রদের বিরোধী দল হওয়ার আগ্রহ
বুধবার শপথ নিতে এসে কয়েকজন স্বতন্ত্র সদস্য সংসদে বিরোধী দল হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য থেকে স্বতন্ত্রদের সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসার আভাস পাওয়া যায়।
এদিন জাতীয় সংসদ ভবনে শপথ গ্রহণের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী সংসদে বিরোধী দল গঠনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে জোট গঠন করার কথা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় নিক্সন চৌধুরী বলেন, “এখনো বিরোধী দল গঠন হয় নাই। আমরা আজ শপথ নেব, তারপর আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা জোট করব, জোট অবশ্যই করব।”
সংসদে বিরোধী দলের বিষয়ে ফরিদপুর-৩ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবাই একত্রে থাকব, এ রকম একটা আলোচনা আমাদের মধ্যে হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “তবে সব কিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। যেহেতু আমরা অধিকাংশই এসেছি আওয়ামী লীগ থেকে।”
শপথ গ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “সংসদের বিরোধী নেতা কে হবেন তা সংসদ নেতা ও স্পিকার ঠিক করে নেবেন।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “একতরফা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হওয়ায় এখন সরকার মূলত বিরোধী দল সংকটে পড়েছে। স্বতন্ত্রদের নিয়ে চাইলে বিরোধী দল করতে পারে। তবে সেটা যাই হোক, একটা ডামি বিরোধী দল হতে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “এই বিরোধী দল গঠন হবে একটি নজিরবিহীন ঘটনা।”
শপথ গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকতে আগ্রহী তাঁর দল।
“আমি ঠিক জানি না, নিয়মটা কী। তবে আমরা বিরোধী দলে ছিলাম এবং বিরোধী দলে থাকতে চাই। আমরা জনকল্যাণমুখী যেটা জনগণের ভালো হয় সেটিই আমরা করতে চাই,” বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, সংসদে জাতীয় পার্টির আসন ১১টি। আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২ট আসন।

শপথ নিতে যাচ্ছেন ৩৬ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী
নতুন মন্ত্রিপরিষদে শপথের জন্য আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন—পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, নোয়াখালী-৫ আসনের ওবায়দুল কাদের, নরসিংদী-৪ আসনের নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, ঢাকা-১২ আসনের আসাদুজ্জামান খান, চাঁদপুর-৩ আসনের ডা. দীপু মনি, কুমিল্লা-১ আসনের মো. তাজুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ-১ আসনের মুহাম্মদ ফারুক খান, দিনাজপুর-৪ আসনের আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আনিসুল হক, চট্টগ্রাম-৭ আসনের ড. হাছান মাহমুদ, মৌলভীবাজার-৪ আসনের মো. আব্দুস শহীদ, নওগাঁ-১ আসনের সাধন চন্দ্র মজুমদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের র. অ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ফরিদপুর-১ আসনের মো. আব্দুর রহমান, খুলনা-৫ আসনের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ময়মনসিংহ-৯ আসনের আব্দুস সালাম, চট্টগ্রাম-৯ আসনের মহিবুল হাসান চৌধুরী, মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেন, জামালপুর-২ আসনের মো. ফরিদুল হক খান, রাজবাড়ী-২ আসনের মো. জিল্লুল হাকিম, ঢাকা-৯ আসনের সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১৩ আসনের জাহাঙ্গীর কবির নানক, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের নাজমুল হাসান ও টেকনোক্র্যাট কোটায় স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং ডা. সামন্ত লাল সেন।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন (রিমি), ঢাকা-৩ আসনের নসরুল হামিদ, নাটোর-৩ আসনের জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা-১৭ আসনের মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পটুয়াখালী-৪ আসনের মো. মহিবুর রহমান, দিনাজপুর-২ আসনের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বরিশাল-৫ আসনের জাহিদ ফারুক, খাগড়াছড়ির কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, গাজীপুর-৩ আসনের রুমানা আলী, সিলেট-২ আসনের শফিকুর রহমান চৌধুরী, টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলামের (টিটু) নাম রয়েছে।
আবারও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা
বুধবার সকালে সংসদ ভবনে শপথ অনুষ্ঠান শেষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের এক সভায় টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করেন আওয়ামী লীগের সাংসদরা।
ওই বৈঠকে মতিয়া চৌধুরীকে সংসদ উপনেতা এবং নূর-ই-আলম চৌধুরীকে চিফ হুইপ নির্বাচিত করা হয়।
এছাড়া শিরীন শারমিন চৌধুরীকে স্পিকার ও শামসুল হক টুকুকে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী সংসদের প্রথম অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের নির্বাচন হবে বলে বেনারকে জানান নূর-ই-আলম চৌধুরী।
নির্বাচন নিয়ে ইইউ, কানাডা ও জাপানের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন নিয়ে মঙ্গলবার ও বুধবার ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতিতে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা ও জাপান।
নির্বাচন চলাকালে এবং এর আগে ও পরে সংঘটিত সহিংসতার তদন্ত ও চলমান সংকট নিরসনে সব পক্ষের মধ্যে সংলাপ চেয়েছে ইইউ।
“যথা সময়ে সব নির্বাচনী অনিয়মের পূর্ণ তদন্ত” নিশ্চিত করতেও আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
এতে জিএসপি প্লাস অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য প্রকল্পে দেশের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ অ্যাক্সেসসহ রাজনৈতিক, মানবাধিকার, বাণিজ্য ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইইউ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে বলেও জানানো হয়।
মঙ্গলবার রাতে বিবৃতিতে কানাডা জানায়, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হয়েছে, তা গণতন্ত্র ও দেশটির স্বাধীনতার মূলনীতি থেকে ছিটকে পড়েছে।
“বাংলাদেশি নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রশংসা ও সমর্থন করে কানাডা এবং নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন চলাকালে ঘটে যাওয়া ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার নিন্দা জানায়,” বলা হয় বিবৃতিতে।
বুধবার এক বিবৃতিতে নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে জাপান দূতাবাস বলেছে, যদিও সাধারণ নির্বাচনে কিছু অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে, তবুও নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। জাপানের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, নির্বাচন প্রক্রিয়া যথাযথ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় হতাশা প্রকাশ করে জাপান জানায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হতাহতসহ বিভিন্ন সহিংসতার তথ্য পাওয়া গেছে।