সংসদ নির্বাচন শুরু, ভোটারের খরা
2024.01.07
ঢাকা

ভোটারের খরার মধ্য দিয়ে রোববার বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল আটটায় শুরু হওয়া এই ভোট বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। বিরোধীদের হরতাল কর্মসূচির মধ্যে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ভোট শুরুর পর দুই ঘণ্টা পার হলেও রাজধানী ঢাকার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ভোটার উপস্থিতি দেখার জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন।
প্রথম দুই ঘণ্টায় বেনারের তিনজন প্রতিনিধি ঢাকার অন্তত ১০টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে ভোটারের তেমন উপস্থিতি দেখতে পাননি।
ঢাকা-১৬ আসনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার বিশ্বাস বেনারকে বলেন, সেখানে ২ হাজার ৮৩৫টি ভোট। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
পল্লবী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কয়েকজন ভোটার দেখা যায়। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, সেখানে ভোটার ২ হাজার ১১৭। কিন্তু সকাল নয়টা পর্যন্ত কত ভোট পেড়েছে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন না করায় ভোট বর্জন করেছে বিরোধীদল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। সেই সঙ্গে ভোট বর্জনের জন্য প্রচার চালিয়ে ভোট না দিয়ে ঘরে অবস্থান করে দেশবাসীকে হরতাল কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
অন্যদিকে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতিহত করতে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন শুরুর পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটারের উপস্থিতি কম নাকি বেশি সেগুলো আমি কিছুই জানি না। আমি এসে আমার ভোটটা দিয়ে গেছি, এতটুকুই জানি।
এ সময় তিনি শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।
রোববার সকালে রাজধানীর শান্তিনগরে হাবীবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পরে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ কথা বলেন।

নৌকার জয় হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে সকাল আটটায় তাঁর ভোট দেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানমন্ডি সুধা সদনের ঠিকানায় ভোটার হওয়ায় তিনি এ কেন্দ্রে ভোট দেন।
এ সময় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট এবং কলাবাগান থানা এলাকা নিয়ে ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের একটি ভোটকেন্দ্র ঢাকা সিটি কলেজ। এই আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ।
অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যেও ভোট দেয়ার পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে ভোট দেবার পর সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অনেক সংগ্রাম করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হয়েছে। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিবে-এটাই বড়ো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির উত্থান “সন্ত্রাসের মাধ্যমে। জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। নৌকার জয় হবে। জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম আওয়ামী লীগ।”
জনগণ আওয়ামী লীগের পাশে আছে। বিএনপি জামায়াতের হরতাল তাল হারিয়ে ফেলেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এবারের সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০ জন নারী। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৪৮ জন।
২৮ দলের ১৯৬৯ প্রার্থী
দেশের ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দল এবারের ভোটে অংশ নিচ্ছে। বিএনপিসহ সমমনা ১৬ দল এ ভোট বর্জন করেছে।
নির্বাচনে ২৯৯ সংসদীয় আসনে ভোটের মাঠে লড়ছেন ১ হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী। তার মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩২ জন প্রার্থী লড়াই করছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৭ জন।
মোট ৩০০ আসনের মধ্যে নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের মৃত্যুর কারণে সেখানে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
এই নির্বাচনে ৯২ জন নারী ও ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী ও ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দেশে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া রয়েছেন ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং ৪২ হাজার ১৪৯ জন প্রিসাইডিং অফিসার।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মাঠ পর্যায়ে পুলিশ, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, , কোস্টগার্ডসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারক মাঠে থাকছেন, যারা যেকোনো অপরাধে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে পারবেন।

ভোট পর্যবেক্ষণ
স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক ছাড়াও প্রায় দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, বুধবার বিকেল পর্যন্ত ১৮৬ জন পর্যবেক্ষক-সাংবাদিককে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন গণমাধ্যমকর্মী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ২২ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন।
সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে ঘোষিত তফসিল অনুসরণে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত লাইসেন্সধারীদের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।