কুয়াকাটায় ভেসে এলো সংকটাপন্ন ইরাবতী ডলফিনের মৃতদেহ
2022.04.06
ঢাকা
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বুধবার সংকটাপন্ন ইরাবতী ডলফিনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। একইদিন কুয়াকাটায় চারটি মৃত কচ্ছপও উদ্ধার করেছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
এই নিয়ে গত এক মাসে কুয়াকাটা উপকূলে ছয়টি ইরাবতী ডলফিন এবং আটটি কচ্ছপ মৃত অবস্থায় উদ্ধার হলো।
ঘন ঘন ডলফিন মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে মৃত একটি ডলফিন ও চারটি কচ্ছপ উদ্ধারের সংবাদ নিশ্চিত করে পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বুধবার বেনারকে বলেন, “ডলফিনটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।”
বুধবার পর্যন্ত গত এক মাসে কুয়াকাটায় মোট ছয়টি মৃত ডলফিন এবং আটটি কচ্ছপ উদ্ধারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি উদ্বেগের।”
“আমরা মৃত ডলফিনটি ইরাবতী প্রজাতির বলে নিশ্চিত হয়েছি। তবে কচ্ছপগুলো কোন প্রজাতির সেব্যাপারে নিশ্চিত নই। এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে,” বলেন আল মামুন।
ডলফিন বাংলাদেশে শুশুক নামে পরিচিত। কয়েক দশক আগেও দেশের ছোট নদীতেও শুশুক দেখা যেত। তবে এখন দেশের কয়েকটি নদীতে স্বল্পসংখ্যক শুশুক রয়েছে।
বাংলাদেশে মূলত গঙ্গা নদী প্রজাতির এবং ইরাবতী প্রজাতির ডলফিন দেখা যায়। বিশ্বের সংকটাপন্ন প্রাণীগুলোর মধ্যে ইরাবতী ডলফিন একটি।
সরকারের ডলফিন অ্যাকশন প্ল্যান ২০২০-৩০ অনুযায়ী, ইরাবতী প্রজাতির ডলফিন নোনা পানি পছন্দ করে। দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় এদের বিচরণ। তবে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায় ইরাবতী ডলফিনের বিচরণ বেশি।
এই প্রজাতির ডলফিনের ওজন ৯০ থেকে ১৫০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন সোসাইটির ২০০৯ সালের জরিপে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলে প্রায় ছয় হাজার ইরাবতী ডলফিন রয়েছে। কিন্তু দশ বছরে সেই সংখ্যা কমে পাঁচশ’র নিচে নেমে এসেছে বলে জানা যায়।
সংস্থাটির ২০১৮-১৯ সালের জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের উপকূলে রয়েছে মাত্র ৪৮৫টি ইরাবতী ডলফিন।
জেলেদের জাল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইরাবতী ডলফিন হুমকির মুখে বলেও জানায় সংস্থাটি।
২০১৯ সালে গৃহীত বাংলাদেশ ডলফিন অ্যাকশন প্ল্যান ২০২০-২০৩০ অনুযায়ী, বাংলাদেশের সুন্দরবনে ১৯৮টি, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার উপকূলে ৩০টি ইরাবতী ডলফিন রয়েছে।
এছাড়া নিঝুমদ্বীপ মেরিন রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান ২০১৯-২০৩৪ এর খসড়ায় বলা হয়েছে, নোয়াখালী জেলার নিঝুমদ্বীপ উপকূলে ৯৩টি ইরাবতী আছে।
‘ডলফিন জলজ প্রাণীদের রক্ষা করে’
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা ফিশিং ট্রলার সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান বুধবার বেনারকে বলেন, “মাঝে মধ্যে সাগরে শুশুক (ডলফিন) মরে ভেসে ওঠে। অনেক সময় মাঝিদের জালে আটকা পড়ে আর বের হতে না পেরে মারা যায়, সাগরে ভেসে ওঠে।”
কত সংখ্যক ডলফিন মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “খুব বেশি যে মারা যায় তা নয়। বছরে দু-চারটি মরে। এর বেশি নয়।”
“জলজ পরিবেশ রক্ষায় যে সকল প্রাণীর অবদান ওপরের দিকের ডলফিন তাদের একটি,” বলে বুধবার বেনারকে জানান ডলফিন নিয়ে গবেষণা করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ।
ডলফিন অন্যান্য প্রাণীদের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়তা করে থাকে,” বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “ডলফিন স্তন্যপায়ী প্রাণী। এটি প্রতি তিন থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে পানির ওপরে উঠে শ্বাস নিয়ে আবার পানিতে চলে যায়। এর মাধ্যমে প্রাণীটি পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ রক্ষায় সহায়তা করে থাকে।”
“পানিতে পরিমাণ মতো অক্সিজেন না থাকলে মাছ বাঁচে না। তাই ডলফিন মাছের অস্তিত্ব রক্ষায় ভূমিকা রাখে,” বলেন অধ্যাপক আজিজ।
তিনি বলেন, “অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে জেলেদের ইলিশ ধরা জালে ডলফিন আটকা পড়ে। জালে আটকা পড়লে সে আর পানির ওপরে উঠে অক্সিজেন নিতে পারে না এবং মারা যায়।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকাসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ডলফিনের অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের দেশের সবকিছু্ই আছে কাগজে-কলমে। বাস্তবে দেখা যায় কম। ডলফিন রক্ষার জন্য প্রাধান্য নেই বলা যায়।”
“আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ইরাবতী ডলফিনকে রক্ষা করতে হবে,” যোগ করেন এই অধ্যাপক।