যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি
2023.01.05
ঢাকা
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা চীনের তুলনায় বেশি হারে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ দিয়েছেন।
চীন থেকে সরে আসা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতাদের বাংলাদেশ আকৃষ্ট করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাঁদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশ থেকে পোশাকের অর্ডার বৃদ্ধির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, অপেক্ষাকৃত কম খরচ, নির্ভরযোগ্যতা এবং সহজ শ্রমের প্রাপ্যতা।
যার ফলে “চীন থেকে সরে আসা ক্রেতাদের বাংলাদেশ পাচ্ছে,” বেনারকে বলেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইলস এন্ড অ্যাপারেলস (ওটেক্সার) এর তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশটি বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক পণ্য, যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৯ শতাংশ বেশি।
গত বছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি করেছে ১৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক পণ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের প্রথম ১০ মাসে দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক আমদানি হয়েছিল ১৬ বিলিয়ন ডলার।
ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের এবং চীন থেকে ১৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক পণ্য আমদানি করেছিল, যেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৩৭% ও ২৯%।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ এন্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (রেপিড) এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বেইজিংয়ের সঙ্গে দেশগুলোর সম্পর্কের বিষয়টিকে বিশেষভাবে ইঙ্গিত করেছেন।
বেনারকে তিনি বলেন, “পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চীনের টেনশন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলোতে ক্রয়াদেশ বাড়ার অন্যতম কারণ। মনে হচ্ছে, কিছু বড়ো বড়ো মার্কিন ক্রেতা চীনের সঙ্গে তাদের ব্যবসা ক্রমান্বয়ে কমাতে চায়।”
নারায়ণগঞ্জের ৩০ হাজার শ্রমিকের প্রতিষ্ঠান ক্রনি গ্রুপ এর চেয়ারম্যান নীলা হোসনে আরা জানিয়েছেন, চীন থেকে ক্রয়াদেশ কমিয়ে বাংলাদেশে বাড়ানো শুরু হয়েছে।
“যেসব ক্রেতা চীনের সঙ্গে ব্যবসা করত, এমন কিছু ক্রেতা আমাদের এখানে ব্যবসা বাড়াচ্ছে,” বেনারকে বলেন তিনি।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান মনে করেন, কেবল বাংলাদেশ নয়, এই সুবিধা (চীন থেকে সরে আসা ব্যবসা) অন্যরাও পাচ্ছে।
বেনারকে তিনি বলেন, “পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশ, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি আদেশের হার বাড়াচ্ছে।”
প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (ইউএসএফআইএ) ২০২২ সালের জুলাইয়ে প্রকাশিত জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরবর্তী দুই বছরে ৫৫ শতাংশ মার্কিন ক্রেতা (এক্সিকিউটিভ) চীন ও ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে বেশি হারে পোশাক ক্রয়ের চিন্তা করছেন।
ইউএসএফআইএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, “উত্তরদাতাদের মন্তব্যগুলো দেখায় যে, কোম্পানিগুলো চীনের পোশাক সরবরাহের উপর নির্ভরতা কমানোর উপায় খুঁজছে।”
বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসও।
মন্তব্য জানতে চাইলে বেনারকে দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো রপ্তানি গন্তব্য, এবং মার্কিন পোশাক খাতের কোম্পানিগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারদের মধ্যে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করছে।”
“আমরা বাংলাদেশের সাথে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেই। মার্কিন বাণিজ্যিক আমদানিতে বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ বাংলাদেশের অবস্থান এর তৈরি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক গুণমানকে চিত্রিত করে।”
চীন এখনো বিশ্বের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ এবং বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মধ্যে পোশাকের অবদান ৮০ শতাংশের বেশি।
গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ একক মাসে পোশাক এবং সার্বিকভাবে মোট রপ্তানিতে রেকর্ড করেছে। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে, যার মধ্যে তৈরি পোশাকের অংশ ছিল ৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।