ঈদের বাকি অল্প দিন, এখনো বেতন-বোনাস পাননি অধিকাংশ পোশাক শ্রমিক
2022.04.25
ঢাকা

ঈদের ছুটি শুরু হতে কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনো বেতন ও ঈদ বোনাস পাননি অধিকাংশ গার্মেন্টস শ্রমিক। বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিল্প এলাকায় বিক্ষোভ হচ্ছে। সোমবার রাজধানীতেই বিক্ষোভ করেছেন তিনটি কারখানার কয়েকশ শ্রমিক।
প্রথম দফায় সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ এপ্রিল সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলে তা মানতে পারেনি প্রায় কোনো কারখানাই। পরবর্তীতে সরকার আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধের জন্য নির্দেশনা দিলেও শ্রমিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
অবশ্য মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ঈদের ছুটির আগেই শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধে আন্তরিক তাঁরা।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বেনারকে বলেন, “ক্যাশ ক্রাইসিসের কারণে কিছু কিছু কারখানায় সাময়িক বিলম্ব হচ্ছে, তবে ঈদের আগেই শতভাগ কারখানায় বেতন বোনাস পরিশোধ হয়ে যাবে।”
মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বেনারকে বলেন, “আশা করি সব শ্রমিকরা ঈদের ছুটির পূর্বেই তাঁদের বকেয়া বেতন ও বোনাস পেয়ে যাবেন। এটা নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই।”
তিনি বলেন, গত দুই মাস শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তবুও শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে সর্বোচ্চ আন্তরিক রয়েছেন।
রাজধানীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
সোমবার রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে মিরপুরে সড়ক অবরোধ করে কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের অবরোধের কারণে মিরপুর ১০ থেকে ১২ নম্বর প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে আশপাশের সড়কে তৈরি হয়েছে যানজট।
এই কারখানার শ্রমিকরা এর আগে গত শনিবার একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছিলেন।
পোশাক শ্রমিক ইউনুস মিয়া সাংবাদিকদের জানান, এই কারখানা শ্রমিকদের গত তিন মাস ধরে বেতন বকেয়া। বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস ২০ এপ্রিল দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা তা পাননি।
এসময় শ্রমিকরা বলেন, বেতন-বোনাস বকেয়া রেখেই কারখানার বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কয়েকদিন আগে মালিক গা ঢাকা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহ কামাল বেনারকে বলেন, “এই কারখানাটির দুইজন মালিক। তাঁরা দুজনই পলাতক থাকায় এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
তিনি জানান, শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের ক্ষেত্রে কী করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।
রাজধানীর উত্তরা এলাকার জসীম উদ্দিন ও আজমপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড এবং ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেড নামে দুইটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
দুই মাসের বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভরত পোশাক শ্রমিকেরা পুলিশের হামলার মুখে সরে যান বলে বেনারকে জানান স্থানীয় শ্রমিক নেতা কে এম মিন্টু।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইল উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়। কোনো প্রকার হামলার ঘটনা ঘটেনি।”
এদিকে উত্তরায় শ্রমিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে হামলার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
এতে বলা হয়, “বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করার দাবিতে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক গত ৬ দিন যাবত কারখানায় অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার ও বিজিএমইএ আজ পর্যন্ত বকেয়া পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়নি। বরং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সময় আজ পুলিশ শ্রমিকদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে।”
অধিকাংশ কারখানায় বেতন-বোনাস বাকি
বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশের তথ্য মতে, ৯৭ ভাগেরও বেশি তৈরি পোশাক কারখানা সোমবার পর্যন্ত শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করেনি। ঈদ মে মাসের শুরুতেই হবে বলে চলতি এপ্রিল মাসের ১৫দিনের বেতন পরিশোধে শিল্প মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছিলো সরকার।
শিল্প পুলিশের হিসাব বলছে, বিজিএমইএর এক হাজার ৬১৫টি কারখানার মধ্যে এক হাজার ৫৮০টি, বিকেএমইর ৬৮৫টির মধ্যে ৬৫৪টি, বিটিএমইর ৩৩৮টির মধ্যে ৩২৯টি এবং বেপজার ৩৪৩টির মধ্যে ৩৩৮টি কারখানা এখনো শ্রমিকদের চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করেনি।
অপরদিকে শ্রমিকদের ঈদ বোনাস এখনো পরিশোধ করেনি বিজিএমইএর ৮২৭টি, বিকেএমইর ৪৯৮টি, বিটিএমইর ২০৯টি এবং বেপজার ১১৭টি কারখানা। শতকরা হিসেবে যা ৫৫ ভাগ।
পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের সুপারিটেনডেন্ট (অপারেশন ও ইন্টেলিজেন্স) সোয়েব আহমেদ বেনারকে বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতির ওপর আমরা নিয়মিত নজর রাখছি। শ্রমিক ও মালিকদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করছি, আশা করি কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।”
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বেনারকে বলেন, “শ্রমিকরা যাতে অনতিবিলম্বে তাঁদের বেতন বোনাস পেয়ে যান সে বিষয়ে মালিক ও সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। যেসব কারখানা শ্রমিকদের কয়েক মাসের বেতন বাকি রেখেছে, তা ঈদের আগেই পরিশোধ করতে হবে।”
তাঁর মতে, প্রতি বছরই ঈদের আগে শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে রাস্তায় নামতে হয় মালিকদের অতি লোভের কারণে। এই শ্রমিক নেতা বলেন, কোনো কোনো মালিক এমন ধারণা পোষণ করেন যে, আগে আগে বেতন বোনাস দিলে শ্রমিকরা কাজ শেষ না করেই বাড়ি চলে যাবে।