তৈরি পোশাকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চায় বাংলাদেশ
2020.05.13
ঢাকা

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী দুই বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
পাশাপাশি, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা যেন বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে ক্রয় আদেশ বাতিল না করে সে জন্যও দেশটির সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহকারী ম্যাথিউ পটিনজারের সাথে ফোনালাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহবান জানান। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান জানতে চেয়ে বেনারের পক্ষ থেকে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের মতে, তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক গড়ে ১৪-১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করে। যাতে বার্ষিক শুল্কের পরিমাণ প্রায় ৯০ কোটি মার্কিন ডলারের সমান।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বেনারকে বলেন “বর্তমান এই সংকটকালীন সময়ে এই শুল্ক মওকুফ সুবিধা পেলে আমরা অনেক লাভবান হব।”
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেবার জন্য বাংলাদেশ অনেক বছর ধরে অনুরোধ করে যাচ্ছে জানিয়ে ড. ফাহমিদা বলেন, “তবে আমরা এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সদিচ্ছা এখনও দেখিনি।”
তিনি বলেন, “এর আগে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে, তারা বাংলাদেশকে এই সুবিধা দেবে না। কারণ, তারা মনে করে, বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত হলেও এই শুল্ক দেওয়ার সক্ষমতা আছে,” বলেন ড. ফাহমিদা।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশকে এই সুবিধা দিতে রাজি হলেও ড. ফাহমিদার মতে, তা সময়সাপেক্ষ।
“কারণ সিনেটে বিল পাশ করানোসহ পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা সময়ের ব্যাপার,” বলেন তিনি।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বানের সাথে একমত পোষণ করেছে দেশের তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
করোনার জন্য এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে বলে বেনারকে জানান বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ।
“এই মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আমাদের কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেরাই বন্ধ হয়ে যাবে,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা অত্যন্ত প্রয়োজন।”
“যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে আমরা রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পারব, যদি শুল্কমুক্ত বা কম শুল্ক সবিধা পাই,” বলেন ফয়সাল সামাদ।
সাশ্রয় হবে বড় অঙ্কের টাকা
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে বাংলাদেশের বছরে মোট কত টাকা সাশ্রয় হবে তা এই মুহূর্তে বলা না গেলেও এর পরিমাণ অনেক বড়ো হবে বলে জানান বিজিএমইএ-র অপর সহসভাপতি মো. মশিউল আজম সজল।
তিনি বেনারকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বছরে আমরা প্রায় ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের মতো পণ্য রপ্তানি করি। এর মধ্যে একেক পণ্যের ওপর একের ধরনের শুল্ক থাকে।”
শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেলে বছরে ঠিক কত টাকা সাশ্রয় হবে তা ‘এখনই হিসাব করে বলা মুশকিল,” জানিয়ে সজল বলেন, “তবে গড়ে যদি ১৫ শতাংশ শুল্কও ধরি তাহলে বিরাট অঙ্কের টাকা বাঁচবে।”
উল্লেখ্য, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা (জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রিফারেন্সেস) স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। প্রায় ছয় বছর পর বাংলাদেশি অন্যান্য পণ্য জিএসপি সুবিধা পেলেও তৈরি পোশাক খাতকে এই সুবিধার বাইরে রেখেছে দেশটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহকারী করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ারও অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।