ইথিওপিয়ায় বাংলাদেশি উদ্যোক্তার পোশাক কারখানায় বোমা
2020.11.10
ঢাকা

আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে টাইগ্রে বিদ্রোহীদের দমনে সরকারি বাহিনীর চলমান সামরিক অভিযানে সেখানকার একটি বাংলাদেশি তৈরি পোশাক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ইথিওপিয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেডের (ডিবিএল) ১০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ।
সেখানে আটকা পড়েছেন ১০৭ জন বাংলাদেশি কর্মী। তাঁরা খাদ্য, পানীয় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়াই দিন পার করছেন।
বিনিয়োগ রক্ষা ও আটকে পড়া কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. জব্বার।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহুপাক্ষিক অর্থ বিষয়ক অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও ইথিওপিয়ায় নবনিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলামের সাথে দেখা করেন তিনি।
বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এম এ জব্বারের সাথে দেখা করার পর নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “তিনি আমাকে জানিয়েছেন সোমবার সরকারি বাহিনীর অপারেশনের সময় টাইগ্রে অঞ্চলে অবস্থিত ডিবিএল তৈরি পোশাক কারখানার ভেতরে বোমা পড়েছে, আরেকটি বোমা কারখানার পাশেই পড়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।”
তিনি বলেন, “ওই কারখানায় ১০৭ জন বাংলাদেশি কর্মী আটকা পড়েছেন। তাই উনি এসেছিলেন, আটক বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।”
নজরুল ইসলাম বলেন, “কারখানা ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইথিওপিয়া সরকারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আদ্দিস আবাবায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে আটকে পড়া মানুষদের আগে বাঁচাতে হবে। এরপর কারখানা রক্ষার চিন্তা করা যাবে।”
তবে এ বিষয়ে ডিবিএল গ্রুপের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেননি।
গত দুই সপ্তাহ আগে ইথিওপিয়ার সর্ব উত্তরে অবস্থিত টাইগ্রে অঞ্চলে বিদ্রোহীদের হাতে সরকারি বাহিনী আক্রান্ত হওয়ার পর সেখানে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইথিওপিয়ার সেনারা। সংঘর্ষ এখনও চলছে।
ডিবিএল গ্রুপের কারখানাটি টাইগ্রে অঞ্চলে অবস্থিত। টাইগ্রে অঞ্চলের জনগোষ্ঠী দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ছয় ভাগ। ২০১৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ ক্ষমতায় আসার পূর্ব পর্যন্ত সেখানকার নেতারা ৩০ বছর ধরে ইথিওপিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে ছিলেন।
আবি আসার পর থেকে তাঁদের প্রভাব কমতে থাকে।
তবে এই সংঘাত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ইথিওপিয়ায় বিনিয়োগের ভালো সুযোগ ছিল বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তৈরি পোশাক খাতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে ইথিওপিয়ায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ডিবিএল গ্রুপ।
ডিবিএল গ্রুপের কারখানায় মোট কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের সবাই বাংলাদেশি।
ডিবিএল ছাড়াও অনেক বাংলাদেশি তৈরি পোশাক কারখানা মালিক সেখানে বিনিয়োগ করেছেন। তবে সরকারিভাবে এর হিসাব পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের অনেক বিনিয়োগকারী আফ্রিকায় তৈরি পোশাকখাতে বিনিয়োগ করেছেন,” জানিয়ে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বেনারকে বলেন, “তবে বিজিএমইএ’র কাছে এ–সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারী দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই খাতে বিনিয়োগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে। যেমন, কোনো ক্রেতা যদি দেখেন যে একটি কোম্পানির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ রয়েছে সেক্ষেত্রে তাঁরা সহজেই চুক্তি করে ফেলেন।”
অর্থনীতি বিষয়ক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক মালিকদের কেউ কেউ বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন। ইথিওপিয়ায় বাংলাদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। সেখানে যাওয়ার কারণ হলো, আফ্রিকার দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পায়।”
তিনি বলেন, “সেখানে আমাদের বিনিয়োগকারীরা ভালোই করছিলেন। তবে তাঁদের কারখানা আক্রান্ত হওয়াটা দুঃখজনক ঘটনা। ডিবিএল ইথিওপিয়ায় স্থানীয় কর্মসংস্থান করেছে, অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে।”
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর বলেন, “আমার মনে হয়, এসব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বীমা করা থাকে। তবে এই ঘটনার মাধ্যমে বিদেশে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে যে ঝুঁকি রয়েছে তা দেখা গেলো।”
তিনি বলেন, “ডিবিএল গ্রুপের উচিত বিষয়টি ইথিওপিয়া সরকারের নজরে নেওয়া। কারণ তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করার দায়িত্ব সেই দেশের সরকারের। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারও দেশটির সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারে।”
শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পেতে ইথিওপিয়া ছাড়াও কম্বোডিয়া ও আফ্রিকার দেশে বোতসোয়ানায় তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশি বিনিয়োগ রয়েছে।