বাংলাদেশে এলপিজি’র দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড
2023.02.02
ঢাকা

পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ার দুই দিনের মাথায় এবার বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়ল তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি)।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বৃহস্পতিবার এলপি গ্যাসের দাম ১২ কেজি সিলিন্ডারে ২৬৬ টাকা বাড়িয়ে ভ্যাটসহ নতুন দাম নির্ধারণ করেছে এক হাজার ৪৯৮ টাকা। বিইআরসি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সর্বশেষ দাম ঘোষণা করেছে।
আগের মাসে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ছিল এক হাজার ২৩২ টাকা।
এলপিজি’র এই মূল্য বৃদ্ধি গত দুই বছরে সর্বোচ্চ বলে নিশ্চিত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে এলপিজি’র দাম সর্বোচ্চ বাড়ল।
প্রতি কেজি এলপিজি’র দাম এক মাসের ব্যবধানে ২২ দশমিক ১৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২৪ দশমিক ৮৫ টাকা, যা আগে ছিল ১০২ দশমিক ৭০ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতি মাসে এলপিজি’র দাম সমন্বয় করে। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজি’র এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো।
দাম সমন্বয় সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে আরামকো’র হালনাগাদ করা দামের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডারের ১৩টি ক্যাটাগরির মধ্যে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার একটি। এসব সিলিন্ডারের দাম ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে সমন্বয় করে আসছে বিইআরসি।
নতুন করে মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজি’র (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটারে প্রায় ৬৯ দশমিক ৭১ টাকা, যা আগের মাসে ছিল ৫৭ দশমিক ৪১ টাকা।
ভোক্তার ব্যয় নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি
সরকার মাসে মাসে দাম সমন্বয় করলেও গ্রাহকদের অভিযোগ, তাঁরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে খুচরা বাজার থেকে এলপিজি কিনতে পারেন না।
রাজধানীর মুগদা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মোফাজ্জল বেনারকে বলেন, “গত তিন বছর ধরে আমি বাসায় রান্নার কাজে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছি। সব সময়ই সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আমাকে বেশি গুনতে হয়।”
মিরপুরের বাসিন্দা মাহিনুর আক্তার বেনারকে বলেন, “আমাদের বাসায় লাইনের গ্যাস থাকলেও সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন না। যে কারণে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হয়। দাম প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকাটা আমাদের জন্য ভীষণ চাপ হয়ে গেছে।”
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের মতো দেশে এলপিজি’র দাম সমন্বয় করার কোনো যুক্তি নেই।”
“সরকার নির্ধারিত দামে মানুষ এলপিজি কিনতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দাম আদায় করছে এবং নতুন মূল্য তাঁদের জন্য দাম বাড়ানোর নতুন সুযোগ করে দিচ্ছে,” বলেন তিনি।
বিইআরসি যখন দাম কমিয়েছে তখন ব্যবসায়ীরা দাম কমাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এলপিজি’র দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দেবে। দেশের কেউই সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা ভাবছে না।”
নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী, সাড় পাঁচ কেজি থেকে ৪৫ কেজির ১৩ ক্যাটাগরি ছাড়াও অন্যান্য ১২ ক্যাটাগরিতে বিক্রি হওয়া এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সর্বনিম্ন ৬৮৭ টাকা থেকে পাঁচ হাজার ৬১৮ টাকার মধ্যে পড়বে।
সরকারি হিসাবে, স্থানীয় বাজারে এলপিজি’র চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশই সৌদি আরব থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এলপি গ্যাস লিমিটেড বাকি দুই শতাংশ সরবরাহ করে।
বাংলাদেশে বেসরকারি এলপিজি খাত নিয়ন্ত্রণ করে দুই ডজনেরও বেশি কোম্পানি।
চাহিদার বাকি অংশ সরবরাহ করা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এলপি গ্যাস কোম্পানির বিপণন করা এলপিজি’র দাম একই থাকবে।
সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ‘অস্বাভাবিক’ বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বলেছে, সরকার ‘দাম বৃদ্ধির পাগলা ঘোড়া’ ছেড়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে তছনছ করছে।
দলটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে সিলিন্ডার গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, ১৯ দিনের মধ্যে দু’বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, আজ সিলিন্ডার গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, ওষুধ, ডিটারজেন্ট, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ ব্যবহার্য জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে তছনছ করছে।”