প্রথমবারের মতো ভারত থেকে পাইপ লাইনে ডিজেল আনবে বাংলাদেশ

কামরান রেজা চৌধুরী
2023.01.11
ঢাকা
প্রথমবারের মতো ভারত থেকে পাইপ লাইনে ডিজেল আনবে বাংলাদেশ জেনারেটরের তেল হিসেবে ডিজেলের চাহিদা বেশি। লোডশেডিং বাড়লেই বেড়ে যায় ডিজেলের চাহিদা। তেলের ড্রাম ও গ্যালন নিয়ে ক্রেতারা হাজির হন পাম্পগুলোতে। ছবিটি রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকা থেকে তোলা। ৪ অক্টোবর ২০২২।
[বেনারনিউজ]

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাইপ লাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নুমালিগড় তেল শোধনাগার থেকে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপ লাইনের মাধ্যমে ৬০ হাজার মেট্রিকটন ডিজেল আমদানির প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়। অর্থ মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

১৩০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে এই ডিজেল আমদানিতে খরচ হবে ৫৪৫ কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যানিং) খালিদ আহম্মেদ বেনারকে বলেন, এই ডিজেল পাইপ লাইনের মাধ্যমে নুমালিগড় থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় আনা হবে। পরে সেখান থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ডিজেল বহন করা হয়। এতে খরচ এবং সময় দুটিই বেশি লাগে বলে জানান তিনি।

পাইপ লাইনের মাধ্যমে ডিজেল আনা হলে সহজে ও কম খরচে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান খালিদ।

অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবে থেকে এই ডিজেল সরবরাহ শুরু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে খালিদ বলেন, “পাইপ লাইনের তৈরির কাজ প্রায় শেষ। সামান্য কিছু কারিগরি কাজ বাকি রয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পাইপ লাইন দিয়ে পার্বতীপুরে ডিজেল আনা সম্ভব হবে।”

বাংলাদেশের খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় পরিবহন ছাড়াও সেচের জন্য ডিজেল ব্যবহৃত হয়। ডিজেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে সেচ সুবিধা ব্যাহত হয় এবং দেশের খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম ও পরিশোধিত ডিজেলসহ বিভিন্ন জ্বালানি সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানির মাধ্যমে আমদানি করতে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করা হয়। সেখান থেকে ডিজেল উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে পরিবহন খরচ যুক্ত হয়।

কিছু বিষয় বিবেচনায় না নিলে “প্রকল্পটি বোঝা হতে পারে”

বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর জংশনে ডিজেল ডিপো রয়েছে। বর্তমানে নুমালিগড় থেকে প্রতি মাসে দুই হাজার ২০০ মেট্রিকটন ডিজেল আমদানি করে বাংলাদেশ।

বর্তমানে নুমালিগড় থেকে ডিজেল নিয়ে ভারতীয় রেলওয়ে ট্যাংকারগুলো নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন আসে। সেখান থেকে ভারতের রাধিকাপুর এবং বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলা দিয়ে পার্বতীপুর জংশনে এসে ডিজেল সরবরাহ করে।

এই জংশনে দ্রুত ডিজেল সরবরাহ করতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সে নুমালিগড় থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপ লাইন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

ভারতীয় অর্থায়নে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৫২০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ভারত সরকার দিয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ম. তামিম বুধবার বেনারকে বলেন, “প্রকল্পটি আপাত দৃষ্টিতে ভালো। কারণ বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ডিজেল উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হয়। এতে সময় এবং খরচ দুটিই বাড়ে। এ ছাড়া, সিস্টেম লস নামে চুরি রয়েছে।”

“পাইপ লাইনের মাধ্যমে ডিজেল আনা হলে খরচ এবং সময় দুই-ই বাঁচবে,” জানিয়ে তিনি বলেন, তবে কিছু বিষয় বিবেচনায় না নিলে “প্রকল্পটি বোঝা হতে পারে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে সেই পরিমাণ ডিজেল আমদানি করতে হবে, যা দিয়ে প্রকল্পটি অর্থনৈতিকভাবে চালুর যোগ্য হবে। কারণ ভারত এই প্রকল্পে টাকা দিলেও সেই টাকা তো আমাদের ফেরত দিতে হবে।”

“এত টাকা খরচ করে যদি অল্প পরিমাণ ডিজেল আমদানি করা হয় তাহলে প্রকল্পটির জন্য টাকা শোধ করতে হবে এবং আবার বেশি দামে ডিজেল কিনতে হবে,” বলেন অধ্যাপক তামিম।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বেনারকে বলেন, “ডিজেল অথবা অন্য কোনো জ্বালানির জন্য বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই এককভাবে কোনো রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের রিফাইনারিগুলো বন্ধ করা যাবে না। অন্য উৎস থেকে জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই আমরা এই পাইপ লাইনের সুবিধা পাব।”

“আমাদের রিফাইনারিগুলো না থাকলে ডিজেল সরবরাহের জন্য শুধুমাত্র একটি উৎসের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। ফলে একচেটিয়া বাজারে বিক্রেতা দফায় দফায় দাম বৃদ্ধি করলে বাংলাদেশের কিছুই করার থাকবে না,” বলেন ইজাজ হোসেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।