দুমাসের জন্য সাংবাদিক কাজলের বিরুদ্ধে মামলার বিচার স্থগিত

আহম্মদ ফয়েজ
2022.06.01
ঢাকা
দুমাসের জন্য সাংবাদিক কাজলের বিরুদ্ধে মামলার বিচার স্থগিত হাজিরা দিতে এসে ঢাকার আদালতের বারান্দায় অপেক্ষা করছেন শফিকুল ইসলাম কাজল। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
[বেনারনিউজ]

ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের তিনটি মামলার বিচার কার্যক্রমে দু’মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করার অভিযোগে দায়ের হওয়া এসব মামলায় নিম্ন আদালতে বিচার চলছিল।

এ বিষয়ে কাজলের তিনটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো.আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই মাসের জন্য সব মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। আবেদনে এসব মামলা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বলে দাবি করা হয়।

“মামলাগুলো আর চলবে কিনা, তা নির্ধারণ করতে আগামী ২৭ জুলাই চূড়ান্ত শুনানি করবে উচ্চ আদালত,” বেনারকে বলেন কাজলের পক্ষে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

ওই শুনানির আগ পর্যন্ত মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে জানান জ্যোতির্ময়।

তবে হাইকোর্টের এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে বলে বেনারকে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুজিত কুমার।

গত বছরের ৮ নভেম্বর ঢাকার শেরেবাংলা নগর, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানায় দায়ের পৃথক তিন মামলায় কাজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

ওই আদেশ বাতিল চেয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করেন কাজলের আইনজীবীরা।

মাগুরা-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় ২০২০ সালের ৯ মার্চ কাজলসহ মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করেন। এর একদিন পর ঢাকার হাতিরপুল এলাকা থেকে কাজল নিখোঁজ হন।

পরবর্তীতে ১০ মার্চ হাজারীবাগ থানায় যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সম্পাদক উসমিন আরা বেলী এবং ১১ মার্চ কামরাঙ্গীরচর থানায় যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য সুমাইয়া চৌধুরী বন্যা আরো দুটি মামলা দায়ের করেন।

যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার বিরুদ্ধে অভিজাত হোটেলকেন্দ্রিক যৌনব্যবসা নিয়ে ঢাকার ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নিজের মতামতসহ ফেসবুকে প্রতিবেদনটি প্রকাশের কারণে কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা তিনটি দায়ের করা হয়।

কাজল ‘পক্ষকাল’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা সম্পাদনা করছিলেন।

নিখোঁজ হওয়ার ৫৩ দিন পর বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে কাজলকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বিজিবির দায়ের করা এ সংক্রান্ত মামলায় পরদিনই আদালত তাঁকে জামিন দেয়। কিন্তু কোতোয়ালি মডেল থানার অপর একটি মামলাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলোতে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর জামিনে কারামুক্ত হন কাজল। এর আগে একই বছরের ৪ এপ্রিল সাইফুজ্জামান শিখর, ৪ ফেব্রুয়ারি বেলী ও ১৪ মার্চ বন্যার মামলার অভিযোগপত্র ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জমা দেন মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তা।

ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন পরিস্থিতিতে না পড়েন

কাজলের সাথে যোগাযোগ করা হলে বুধবার তিনি বেনারকে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলে আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা বাতিল হবে।”

ভবিষ্যতে কেউ যেন এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন তা নিশ্চিত করতে আদালতের ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।

কাজল বলেন, নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং হয়রানি মুক্ত রাখতে আদালত থেকে কার্যকর নির্দেশনা আসা উচিত।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে স্বাধীন মত প্রকাশে অন্যতম বাধা ও নিপীড়নমূলক বলে আখ্যা দিয়ে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার ও সাংবাদিক সংগঠন।

গত বছর প্রকাশিত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে প্রায় ৯ গুণ বেশি হয়েছে।

গত বছর দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে এই আইনে দায়ের করা মামলার সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ১৩৪টি।

আসকসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্যমতে, ২০২০ সালে এই আইনে দায়ের করা মামলার সংখ্যা ছিল ১৩০টি, যা ২০২১ সালে বেড়েছে প্রায় নয় গুণ।

তবে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজন হলে আইনটি সংশোধন করা হবে।

এর আগেও আইনমন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে সমালোচিত আইনটি সংশোধনের আশ্বাস দেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।