সৌদিতে আগুনে পুড়ে বাংলাদেশি দুই সহোদরসহ সাতজনের মৃত্যু
2021.02.11
ঢাকা

সংসারে সচ্ছলতা আনতে বছর দুয়েক আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার মিজান। এরপর ছোট ভাই মানিককেও সেখানে নিয়ে যান। স্থানীয় সময় বুধবার ভোরে এক সোফা কারখানায় আগুন লেগে এই দুই সহোদরসহ মোট সাতজন মারা গেলেন।
জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানিয়েছে, মদিনা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ছয়জনই বাংলাদেশি।
এদের মধ্যে দুই ভাই মিজানুর রহমান (২৫) ও মো. আরাফাত হোসেন মানিকের (২৪) মৃত্যুর পর চট্টগ্রামে বসবাসরত তাঁদের বৃদ্ধ মা–বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
একইসাথে উপার্জনক্ষম দুই দুই ভাইকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন নিহতদের বড়ো বোন রুমা আক্তার, যিনি স্বামী পরিত্যক্ত হওয়ার পর এক সন্তান নিয়ে মা–বাবার কাছেই থাকতেন। এরা সবাই নির্ভরশীল ছিলেন মিজান ও মানিকের উপার্জনের ওপর।
রুমা আক্তার বেনারকে বলেন, “পরিবারের সচ্ছলতার কথা ভেবে বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও আমার দুই ভাই বিদেশে গিয়েছিল। মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়ে প্রথমে মিজান ও বছরখানেক আগে মানিক সৌদি আরব যায়। এরই মধ্যে করোনার কারণে তারা দীর্ঘদিন বেকার ছিল। ফলে ঋণ শোধ হয়নি।”
“পরিবারের কথা ভেবেই খুব কষ্টে দিন পার করেও তারা করোনার মধ্যে দেশে ফেরেনি। কিছুদিন হলো তারা আবার কাজে যোগ দিয়েছে। ভেবেছিলাম আমাদের কষ্টের দিন এবার চলে যাবে। দুই মাস পরে দুই ভাইয়ের দেশে ফেরার কথা ছিল,” বলেন রুমা।
দুই সন্তানের মৃত্যুর খবরে তাঁদের বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে বেনারকে জানান নিহত মিজান ও মানিকের ফুফাতো বোন জুবাইদা আক্তার।
তিনি বলেন, “মিজান ও মানিক অবিবাহিত। বাবা-মা ছাড়াও স্বামী পরিত্যক্তা রুমা ও তার সন্তান নির্ভরশীল ছিল দুই ভাইয়ের ওপর।”
ছয় বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন শ্রম কাউন্সেলর আমিনুল ইসলাম। নিহত অন্য বাংলাদেশির পরিচয় সংগ্রহের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
মিজান ও মানিক ছাড়া নিহত যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন; কক্সবাজারের মহেশখালীর ইসহাক মিয়া (২৯), আব্দুল আজিজ (৪৮) ও মো. রফিক উদ্দিন (২১)।
নিহতদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও দাবি করেন তাঁদের স্বজনরা।
জেদ্দা শহর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মদিনায় অবস্থানরত কনস্যুলেট প্রতিনিধিরা। নিহতরা ক্ষতিপূরণ কিংবা ওয়ার্কম্যান কম্পেনসেশন পাবেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মরদেহগুলো বর্তমানে মদিনার কিং ফাহাদ হাসপাতাল মর্গে সংরক্ষিত আছে বলে জানায় জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট।
সৌদিতে ‘অনিরাপদ পরিবেশে’ কাজ করেন বাংলাদেশিরা
প্রায় চার বছর আগে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের একটি সোফা কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে চার বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। তারও আগে দাম্মামের দাল্লা সানাইয়া এলাকার আরেকটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান আরো চার বাংলাদেশি।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বেনারকে বলেন, "সৌদি আরবে বাংলাদেশিরা অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করে থাকেন। এ কারণে নানা ধরনের দুর্ঘটনায় প্রায়ই বাংলাদেশিরা প্রাণ হারাচ্ছেন।"
তাঁর মতে, তাঁদের কর্মপরিবেশ নিরাপদ করা জরুরি। পাশাপাশি নিহত কর্মীদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রতিও গুরুত্ব দেন তিনি।
বর্তমানে ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সৌদিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক বসবাস করেন।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দুই হাজার ৮৮৪ জন বাংলাদেশির মরদেহ সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৬৫৮ জন।
শরিফুল হাসান বলেছিলেন, প্রতি বছর সৌদি আরব থেকেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশির মরদেহ দেশে ফেরে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর অনেক মরদেহ দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।