ইউরোপ যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগর থেকে এক মাসে উদ্ধার ৫২৯
2021.06.14
ঢাকা

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার পথে গত এক মাসে লিবিয়া ও তিউনিশিয়ায় পাঁচশ’র বেশি বাংলাদেশি আটক হয়েছেন বলে সোমবার বেনারকে জানিয়েছেন লিবিয়ায় বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত) গাজী মো. আসাদুজ্জামান কবির।
গত এক মাসে আটক মোট ৫২৯ বাংলাদেশির মধ্যে তিউনিশিয়ায় উদ্ধার হয়েছেন ৪৪৩ জন, ৮৬ জন লিবিয়ায়। তিউনিশিয়া উপকূল থেকে ২৭৯ জনকে মে মাসে এবং ১৬৪ জনকে গত ১০ জুন উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্টগার্ড।
চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জানান, সর্বশেষ উদ্ধার হওয়া ১৬৪ জনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস তিউনিশিয়া কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে।
“এসব বাংলাদেশি অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সাথে ভূমধ্যসাগরের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছাতে চেয়েছিলেন,” ত্রিপোলি থেকে মুঠোফোনে বেনারকে বলেন আসাদুজ্জামান কবির।
তিনি বলেন, “পাচারকারীদের সহায়তায় সাধারণত এরা ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে আসে। সেখানে থেকে পৌঁছায় গৃহযুদ্ধকবলিত লিবিয়ায়। এরপর ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালির পথে রওনা হয়।”
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরে ৮১৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। তবে এর মধ্যে কতজন বাংলাদেশি, সেই তথ্য জানায়নি সংস্থাটি।
‘আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে’
কিছুদিন পরপরই লিবিয়া ও তিউনিশিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রার ক্ষেত্রে নৌকা ডুবে অভিবাসীর মৃত্যু ও আটকের খবর শোনা গেলেও ঝুঁকিপূর্ণ এই পথে বাংলাদেশিদের ইউরোপে যাওয়া থামছে না।
জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “সাম্প্রতিক ইউরোপ যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটকের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। করোনাকালে বৈধপথে বিদেশ যাওয়া কমে যাওয়ায় মানবপাচার বেড়ে যেতে পারে।”
তিনি বলেন, “এসব ঘটনাকে ‘স্মাগলিং অব মাইগ্রেন্টস’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এ বিষয়ক আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলে কিছু আসামি ধরা পড়লেও তারা পার পেয়ে যায়।”
“ইউরোপ যাওয়ার পথে যারা আটক হচ্ছেন কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যেতে পারছেন না তাঁদের কিছু খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বিপরীত দিকে সফল হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। ফলে তারা উদাহরণ হয়ে অন্যদেরও এই বিপদসংকুল পথে যেতে উদ্বুদ্ধ করছে,” বলেন তরিকুল ইসলাম।
লিবিয়ায় বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আসাদুজ্জামান কবির জানান, মে মাসে তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ডের সহায়তায় উদ্ধার ২২১ জন বাংলাদেশির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষ করে তাঁরা এখন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও আইওএম কর্তৃক পরিচালিত শেল্টার হাউসে রয়েছেন।
“তাঁরা জানিয়েছেন, মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে তাঁরা দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান। পরে ছোট ছোট নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তাঁদের ইউরোপ যাত্রা শুরু হয়,” বলেন তিনি।
এদের মধ্যে যারা দেশে ফিরতে আগ্রহী, তাঁদের আইওএমের সহযোগিতায় দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান কবির বলেন, “আমরা কাউকে জোর করছি না।”
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা তিউনিশিয়ায় আছে তারা ফ্রি মুভ করতে পারে বরে জানান তিনি।
“তবে লিবিয়ায় যারা আটক আছে, তাঁদের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। তাঁদের সাথে দেখা করার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়েছি। এরপর তাঁদের দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে,” বলেন আসাদুজ্জামান কবির।
লিবিয়া ও তিউনিশিয়ায় এখন পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশি আটক রয়েছেন সে তথ্য তিনি জানাতে পারেননি।
তবে বাংলাদেশের এই কর্মকর্তা জানান, গত মাসে লিবিয়ার মরুভূমি থেকে ৮৬ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বেনগাজি হয়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ভূমধ্যসাগরে যাওয়ার পথে অপহরণকারীদের কবলে পড়েছিলেন তাঁরা।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, ইউরোপ যাওয়ার পথে মানব পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার হওয়া ১৬০ জন বাংলাদেশি গত মাসে দেশে ফিরেছেন। ২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ২ হাজার ৯০০ জন।