বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের ফ্লাইট চালু

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.09.29
ঢাকা
বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের ফ্লাইট চালু হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলায় একটি ল্যাবে করোনা পরীক্ষার জন্য একজন যাত্রীর নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১।
[সাবরিনা ইয়াসমীন/বেনারনিউজ]

বাংলাদেশের বিমানবন্দরে স্থাপিত ছয়টি ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করায় বুধবার দুপুর থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে সংযুক্ত আর আমিরাত (ইউএই)।

এর ১২ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে ঢাকা থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি ফ্লাইট যাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছে, যেটি গত পাঁচ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরিচালনা করা প্রথম ফ্লাইট।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে বৃদ্ধির কারণে গত এপ্রিল মাস থেকে ইউএই নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে আটকা পড়েন প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী শ্রমিক। তাঁদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম. মফিদুর রহমানকে বুধবার লেখা এক চিঠিতে ঢাকাস্থ সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাসের চার্জ-দ্য-অ্যাফেয়ার্স আব্দুল্লাহ আলী আলহমদি জানান, তাঁর সরকার বাংলাদেশের সাথে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের এই অনুরোধের পরই ফ্লাইট চালুর প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ। 

দুবাইয়ে অবস্থানরত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বুধবার বেনারকে বলেন, “সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বাংলাদেশের সাথে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। তাঁদের অনুরোধের ব্যাপারে আমরাও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সুতরাং, বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশি যাঁরা সংযুক্ত আরব আমিরাত যেতে চান, তাঁরা যেতে পারবেন; সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।”

“এখন বিষয়টি অপারেটরদের ওপর নির্ভর করবে। তারা যখন চাইবে তখন থেকেই ফ্লাইট পরিচালনা করবে,” বলেন ইমরান আহমদ।

“আমরা বৃহস্পতিবার থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফ্লাইট পরিচালনা করব,” জানিয়ে বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বুধবার বেনারকে বলেন, বাংলাদেশের বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ছয়টি ল্যাবকে অনুমতি দেয়া হয়েছে।

ল্যাবগুলো হলো: গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড, স্টামস হেলথকেয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড, সিএসবিএফ হেলথ কেয়ার, এএমজেড হসপিটাল লিমিটেড, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হসপিটাল এবং ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক।

মাহবুব আলী বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের একটি জাতীয় কমিটি রয়েছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমিরাত সরকার বাংলাদেশের সাথে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করার অনুরোধ করে সেদেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।

“এখন থেকে আমিরাত এবং বাংলাদেশ বিমান উভয় অপারেটরই দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করবে,” বলে জানান মাহবুব আলী। 

বুধবার দিবাগত রাতে প্রথম ফ্লাইট

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ উল আহসান বেনারকে বলেন, “বুধবার দিবাগত রাত একটা ৪০ মিনিটে (বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে) সংযুক্ত আমিরাতে একটি ফ্লাইট রওনা হবে।”

সৌদি আরবের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার।

বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ব্যুরোর হিসাবে ১৯৭৬ সালের পর থেকে ২০২১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৪ লাখ মানুষ সংযুক্ত আরব আমিরাত গেছেন, যাদের অধিকাংশই প্রবাসী শ্রমিক অথবা প্রবাসী। তবে তাঁদের প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন বলে জানান কর্মকর্তারা।

বর্তমানে সেখানে কয়েক লাখ বাংলাদেশি কাজ করেন। এছাড়াও, অনেক ধনী মানুষ সেখানে বাড়ি কিনেছেন। অনেক বাংলাদেশি চাকরি এবং ব্যবসার সুবাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করেন।

মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশের সাথে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ ঘোষণা করে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার।

ফলে সেদেশ থেকে ছুটিতে এসে আটকে পড়েন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি।

শর্ত হিসাবে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে কেউ সেদেশে প্রবেশ করতে হলে যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে হবে। সেই প্রতিবেদনে নেগেটিভ হলে তবেই বাংলাদেশ থেকে ইউএই যাওয়া যাবে। 

তবে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে স্বল্প সময়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ল্যাব না থাকায় এই শর্তে বিপত্তিতে পড়ে যান বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী। তাঁরা বিক্ষোভ করেন, দাবি তোলেন পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠার।

সেই সমস্যা সমাধানে এ মাসেই বাংলাদেশের সকল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লালবাগের বাসিন্দা ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন দুবাইয়ের বিদ্যুৎ বিভাগে কাজ করেন। তিনি সেখানে ১৩ বছর ধরে চাকুরি করেন। এ বছর ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন।

মার্চ থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেলে তিনি আটকা পড়েন।

সালাউদ্দিন বুধবার বেনারকে বলেন, “আমি যেতে না পারলে চাকরি নিয়ে ভীষণ সমস্যায় পড়ে যাব। অনেক আন্দোলন–সংগ্রামের পর আমরা যেতে পারছি—এটিই বড়ো আনন্দ।”

“বর্তমানে কমপক্ষে ৩০ হাজার বাংলাদেশি সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন, যাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে। ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে অনেক বাংলাদেশি প্রবাসীর চাকুরির সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো,” বলেন সালাউদ্দিন।

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ১৭৮ জনের দেহে নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এবং ১৭ জন মারা গেছেন। শনাক্তের হার শতকরা চার দশমিক ১২ শতাংশে নেমেছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।