চলতি মাসেই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরু করবে বাংলাদেশ
2022.06.02
ঢাকা

চলতি মাসেই বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।
ঢাকায় দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা শেষে বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। যদিও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট পদ্ধতি থাকবে কিনা-তা স্পষ্ট করেনি কোনো পক্ষই।
“চুক্তি মোতাবেক কীভাবে মালয়েশিয়া লোক নেবে, সেই সিদ্ধান্ত তারাই জানাবে। এটা তাদের অধিকার,” মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানানের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান ইমরান আহমেদ।
চলতি জুন মাস থেকেই লোক পাঠানো শুরু হবে বলে জানান মন্ত্রী।
মালয়েশিয়ার সাথে স্বাক্ষরিত সমঝোতা অনুযায়ী তারাই রিক্রুটিং এজেন্টদের বাছাই করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের কাছে আমরা ১ হাজার ৫২০টি নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠিয়ে রেখেছি, তারা কাদের সঙ্গে কাজ করবে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।”
মালয়েশিয়ার মন্ত্রী সারাভানান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। তবে বৈঠক শেষে বের হয়ে যাবার সময় ‘সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাঁরা কেন শ্রমিক নিতে চান’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সারাভানান বলেন, “এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে মালয়েশিয়ায় গিয়ে। আমাদের মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে।”
প্রসঙ্গত, কর্মী পাঠানো বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে পাঁচ মাস আগে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে আগের সেই বিতর্কিত সিন্ডিকেট পদ্ধতিতেই শ্রমিক নেওয়ায় আগ্রহ দেখানো হয়। এর ফলে একজন কর্মীও মালয়েশিয়া যেতে পারেনি।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এই বৈঠক চলাকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে ২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেট ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচারের অপচেষ্টা করছে।
এই সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক বলেন , “২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ বিপদ ডেকে আনবে।”
তিনি সকল নিবন্ধিত এজেন্সির মাধ্যমে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করার দাবি জানান।
বৈঠকের পর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী সারাভানান ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, “মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশ উভয়ই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সংবাদ সম্মেলনে ইমরান বলেন, তারা শ্রমিকদের মঙ্গল ও কল্যাণ নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হয়েছেন।
পাঁচ লাখ শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, এই চুক্তির অধীনে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া পাঁচ লাখ শ্রমিক নেবে।
“তবে আমরা আশা করছি, প্রথম বছরেই আমরা দুই লাখ কর্মী পাঠাতে পারব,” বলেন ইমরান।
তিনি বলেন, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে মালয়েশিয়ান দেড় হাজার রিঙ্গিত যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা।
তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের এবার মাইগ্রেশন খরচও আগের তুলনায় কম হবে। আগে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা লাগতো।
“মালয়েশিয়ার মন্ত্রী আমাদের বলেছেন যে, তার সরকার ভবিষ্যতে শূন্য-ব্যয় অভিবাসনের জন্য কাজ করছে,” বলেন ইমরান।
শূন্য-ব্যয় অভিবাসন চালু হলে ভবিষ্যতে মালয়েশিয়ায় যেতে শ্রমিকদের কোনো খরচ বহন করতে হবে না। নিয়োগকর্তা এবং মালয়েশিয়া সরকার পুরো খরচ বহন করবে বলে জানান মন্ত্রী।
বৈঠকে বাংলাদেশকে শ্রমিকদের কল্যাণ ও সার্বিক সুবিধার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান সারাভানান।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বছরের জন্য এই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তবে নিয়োগকারী এজেন্ট নির্বাচনের বিরোধের কারণে অভিবাসন কার্যক্রম থেমে ছিল।
মালয়েশিয়া জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে জানায়, তারা ২৫টি বাংলাদেশি এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিতে চায়। তবে এজেন্সিগুলোর নাম প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষ।
সিন্ডিকেশনের কারণেই আগে শ্রমবাজার বন্ধ ছিল
সিন্ডিকেট পদ্ধতির কড়া সমালোচনা করে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বেনারকে বলেন, “মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর কোনো সিন্ডিকেট থাকা উচিত বলে আমি মনে করি না। কারণ এই সিন্ডিকেশনের কারণেই আগে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল।”
তিনি বলেন, সিন্ডিকেট হওয়া উচিত নয়, বরং স্বচ্ছভাবে কর্মী পাঠানো উচিত যাতে কর্মীদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যেতে না হয় এবং সেখানে গিয়ে যেন বিপদে না পড়তে হয়।
মালয়েশিয়া শ্রমবাজার আবারো চালু হওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত মোহাম্মদ উল্লাহ (৪৬) নামে একজন মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি।
বেনারের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমি আগেও মালয়েশিয়ায় ছিলাম আবার যেতে চাই। শুধু আমি নয় আমার আরো কিছু আত্মীয়-প্রতিবেশী মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক।”
মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আগ্রহ থাকলেও সিন্ডিকেটের বিষয়টা নিয়ে তিনি কিছুটা চিন্তিত এবং এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত বুঝতে চান।
জিটুজি প্লাস নামে পরিচিতি ২০১৫ সালের চুক্তিতে ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে পৌনে তিন লাখ কর্মী নিয়েছিল মালয়েশিয়া। এই পদ্ধতিতে প্রথমে ৩৭ হাজার এবং পরে এক লাখ ৬০ হাজার অভিবাসন ব্যয় ধরা হলেও অভিযোগ রয়েছে কর্মী প্রতি সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা আদায় করে এজেন্সিগুলো।
২০১৮ সালে ক্ষমতায় ফিরে মাহাথির মোহাম্মদ জিটুজি প্লাস বাতিল করেন।
সৌদি আরবের পরে বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রমশক্তি গ্রহণকারী দেশ মালয়েশিয়া।
জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন, যা বিশ্বের ১৬০টি দেশে থাকা মোট বাংলাদেশি শ্রমিকের ৭.৮৯ শতাংশ।