মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর খুনি
2020.04.08
ঢাকা

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। তাঁর মৃত্যু পরোয়ানা জারির কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রাণে বাঁচতে সর্বশেষ এই প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেন তিনি।
কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “আবদুল মাজেদ প্রাণভিক্ষার একটি আবেদন দিয়েছেন। সেটি সন্ধ্যার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।”
“এখন আমরা পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। তবে আদেশ যাই হোক না কেন, কারা কর্তৃপক্ষ সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে,” বলেন তিনি।
এর আগে বুধবার দুপুরে আসামি মাজেদকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও মামলার রায় পড়ে শোনান। এরপর আবদুল মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী।
সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বেনারকে বলেন, “ফাঁসির দণ্ড থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ আসামি মাজেদের জন্য খোলা ছিল না। কারণ, রায়ের পর দীর্ঘদিন তিনি পলাতক থাকায় আপিল করার সুযোগ আগেই হারিয়েছেন।”
এখন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে তাঁর প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে দণ্ড কার্যকরে কারা কর্তৃপক্ষের সামনে আর কোনো বাধা থাকবে না বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রায় সাড়ে চারদশক পরে মঙ্গলবার ভোর ৩টার দিকে রাজধানীর মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পরদিনই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশব্যাপী চলা ছুটির মধ্যেই আবদুল মাজেদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়। বিশেষ বিবেচনায় এক দিনের জন্য চালু হয় সংশ্লিষ্ট আদালত।
আবদুল মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা জারির পরেই সেটি কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেন আদালতের কমর্চারীরা। মঙ্গলবার ভোরে গ্রেপ্তারের পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এই আসামিকে সেখানেই রাখা হয়।
আবদুল মাজেদ পলাতক অবস্থায় কোথায়, কীভাবে ছিলেন সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।
তবে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, “২৩ বছর ধরে তিনি কলকাতায় থাকতেন বলে জানান। গত ১৫-১৬ মার্চ আবদুল মাজেদ ঢাকায় ফেরেন।”
বিশেষ বিচেনায় বসে আদালত
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষিত ছুটিতে জরুরি এবং আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়া আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত খোলা হয়।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো বার্তায় জানান, “আদালত ছুটিতে থাকায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল মাজেদের বিষয়ে জরুরি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছিল না।”
“এ বিষয়ে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত সুপ্রিম কোর্টের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের লিখিত আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে ৮ এপ্রিল এই আদালতের ক্ষেত্রে ছুটি বাতিল করে।”
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “রায় কার্যকরে আইনি বিধানে যা আছে, সেভাবেই সবকিছু হবে।”
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন বছরের মাথায় সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে।
ওই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী, তিন পুত্র এবং দুই পুত্রবধূসহ তাঁর পরিবারের ২০ জনের মতো সদস্য নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা সামরিক শাসকেরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করেননি।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে এলে এই নৃসংশ হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। মামলার শুনানি শেষে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ে ১৯৯৮ সালে বিচারিক আদালত সাবেক ১২ সেনা কর্মকর্তার ফাঁসির রায় দেয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আজিজ পাশা ২০০১ সালে বিদেশে মারা যান। ২০০৯ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জীবিত বাকি ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।
এদের মধ্যে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। এরা হলেন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)।
মাজেদকে গ্রেপ্তারের পর বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি রয়েছেন পাঁচজন। তাঁরা হলেন- মোসলেম উদ্দিন, শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আবদুর রশীদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী এবং এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী।
এদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং এসএইচএমবি নূর চৌধুরীর কানাডায় রয়েছেন উল্লেখ করে তাঁদের ফেরত আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।