সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিরোধীদের অবস্থান কর্মসূচি, ১৬ জানুয়ারি বিক্ষোভ

আহম্মদ ফয়েজ
2023.01.11
ঢাকা
সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিরোধীদের অবস্থান কর্মসূচি, ১৬ জানুয়ারি বিক্ষোভ ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১১ জানুয়ারি ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ৩০টিরও বেশি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটের হাজার হাজার নেতা-কর্মী বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড়ো শহরগুলোতে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং রাজনৈতিক বন্দি মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এটি ছিল বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ শহরে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাধা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় সকাল ১০টা থেকে অর্ধ লক্ষাধিক নেতা-কর্মী জড়ো হয়েছিল এবং যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া অন্যান্য দলগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকার গণঅবস্থান কর্মসূচিতে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে বলে দাবি করলেও ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. এনামুল হকের দাবি, বিএনপির কর্মসূচিতে ৪০ হাজারের মতো নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

“বিএনপির কর্মসূচিতে ৪০ হাজারের মতো কর্মী সমবেত হয়েছেন এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই বিএনপি কর্মসূচি শেষ করেছে,” বেনারকে বলেন এনামুল।

বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে ঢাকার পাঁচটি স্থানে সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও।

বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা

বুধবারের গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে আগামী ১৬ জানুয়ারি সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি জানান, বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায় এবং সরকারের বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগের প্রতিবাদে আগামী ১৬ জানুয়ারি জেলা, উপজেলা, মহানগর, পৌরসভা এবং কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচি পালিত হবে।

এর আগে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিএনপিসহ ৩০টির বেশি সমমনা বিরোধী দল একযোগে আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে রাজধানীতে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে।

ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং দলটি তার রাজনৈতিক ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে।”

“বর্তমান সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এ সরকার পুলিশ ও আমলাদের ওপর ভর করেছে,” বলেন ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, “জনগণ জেগে উঠেছে, তাঁরা এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের কাছ থেকে মুক্তি চায়।”

আওয়ামী লীগ দু’বার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে দাবি করে ফখরুল বলেন, “দেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবীরা এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন। এ সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে।”

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর নির্বাসিত ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের শীর্ষ নেতা ফখরুল বলেন, “সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং আগামী নির্বাচনের জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।”

এক মাস আটক থাকার পর সোমবার কারাগার থেকে মুক্তি পান ফখরুল। তিনি জানান, সরকার তাঁদের আন্দোলন দমন ও ক্ষমতায় থাকার জন্য জ্যেষ্ঠ নেতাসহ বিএনপির হাজার হাজার কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে গত বছরের আগস্ট মাস থেকে বিএনপি একই ধরনের বিক্ষোভ করে আসছে।

আওয়ামী লীগকে উৎখাতের মতো শক্তি নেই: প্রধানমন্ত্রী

বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের মতো কোনো শক্তি এখনো বাংলাদেশে তৈরি হয়নি।

“অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে এ দেশের মাটি ও মানুষের কাছ থেকে। কাজেই আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত আছে। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়াসহ অনেকেই চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে কিন্তু পারেননি; পারবেনও না। আওয়ামী লীগে টিকে আছে-থাকবে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকায় আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

বিএনপি গণ-অবস্থানের দিন ঢাকায় কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ। গণ-অবস্থান থেকে ‘বিএনপির সহিংসতা প্রতিরোধ’ ও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আলোচনা সভায় বিএনপির আন্দোলনকে ভুয়া দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আজকের (বুধবার) খবর জানেন, পল্টনে মোটামুটি একটা সমাবেশ হয়েছে। ১২- দলীয় জোট দেখলাম বিজয়নগরে সমাবেশ করছে, সব মিলিয়ে ২৪ জন। ৭-দলীয় জোট প্রেসক্লাবের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে। মঞ্চে ২০ জন, সামনে সাংবাদিকসহ আরও ১৫ জন। ১টা পর্যন্ত ৩ দল উপস্থিত ছিল, ৪ দল নেই। ৭-দলীয় ঐক্যজোট তার পর সমমনা ১২ দল বিএনপির সমমনারা দেখলাম। ওই এলাকা (পল্টন) জুড়েই আছে।”

মন্ত্রী কাদের বলেন, “৫৪ দল আজকে একজন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪টা ঘোড়ার ডিম পাড়বে, ৫৪টি ঘোড়ার ডিম পাড়বে ৫৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। ভুয়া...ভুয়া... ভুয়া... এটা গরুর হাট।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।