শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা: অর্থ, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও পরিবেশসহ ২১ মন্ত্রণালয়ে নতুন মুখ

অয়ন আমান
2024.01.11
ঢাকা
শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা: অর্থ, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও পরিবেশসহ ২১ মন্ত্রণালয়ে নতুন মুখ বঙ্গভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পাঠ করাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। ১১ জানুয়ারি ২০২৪।
[সৌজন্যে: তথ্য অধিদফতর]

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারের অর্থ, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, পরিবেশসহ ২১টি মন্ত্রণালয়ে এসেছেন নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র, আইন এবং সড়ক পরিবহনসহ ১৫টি মন্ত্রণালয়ে থেকে গেছেন পুরোনোরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছিল সরকার গঠন করতে পারলে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে দলটি। সেই মূল দায়িত্ব শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই মন্ত্রিসভার ওপর বর্তাবে।

বিদায়ী মন্ত্রিসভার ৪৫ সদস্যের মধ্যে ২৮ জন বাদ পড়েছেন।

টানা চতুর্থবারের মতো সরকার প্রধান হয়েছেন শেখ হাসিনা। বিগত তিনটি সরকারের তুলনায় এবার মন্ত্রিসভার কলেবর বেশ ছোট। ২০১৯ সালে ৪৬ জন, ২০১৪ সালে ৪৯ ও ২০০৯ সালে ৪৪ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ নেন ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ

মন্ত্রিসভা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বেনারকে বলেন, সংসদীয় রীতিতে ছোট পরিসরের মন্ত্রিসভা একেবারেই স্বাভাবিক।

“এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার, উনি কীভাবে মন্ত্রিসভা সাজাবেন। উনার মনে হতেই পারে কোনো কোনো মন্ত্রীর যোগ্যতায় ঘাটতি ছিল। অন্য কাউকে দায়িত্ব দিলে আরও ভালো করতে পারবেন।”

নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আর্থিক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা ছিল আওয়ামী লীগের ইশতেহারে।

নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ অরাজনৈতিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সরকারকে শক্ত করবে নাকি দুর্বল করবে তা সামনের দিনগুলোতে দেখা যাবে। এই জায়গায় যদি একটা পরিমাপযোগ্য সাফল্য দেখাতে পারে, তাহলে সরকারের এখন যতটুকু শক্তি আছে তা আরও বাড়বে।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ খুব বড়ো হয়ে উঠবে বলে আমার মনে হয় না। বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়াগুলো আমার কাছে ‘মৃদু প্রতিক্রিয়া’ মনে হয়েছে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান তারানা বেগম বেনারকে বলেন, “ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জটা গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে আর্থিক ব্যবস্থাপনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

নতুন ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার আকার ভবিষ্যতে বাড়তে পারে এবং জোটের শরিকরা দুএকটি মন্ত্রণালয় পেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

e5f97b76-4605-468c-8575-5408341e774f.jpg
বঙ্গভবনে নতুন সরকারের মন্ত্রীদের শপথ পাঠ করাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। ১১ জানুয়ারি ২০২৪। [সৌজন্যে: তথ্য অধিদফতর]

নতুন মুখ পেল যেসব মন্ত্রণালয়

অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে সাবের হোসেন চৌধুরীকে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ডা. সামন্ত লাল সেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আব্দুস সালাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ে মো. আব্দুস শহীদ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে মো. জিল্লুল হাকিম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মো. আব্দুর রহমান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে নাজমুল হাসান পাপন।

এছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়ে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ডা. দীপু মনি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে মুহাম্মদ ফারুক খান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আহসানুল ইসলাম টিটু, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বেগম সিমিন হোসেন (রিমি), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে মোহাম্মদ আলী আরাফাত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে মো. মহিবুর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রুমানা আলী এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শফিকুর রহমান চৌধুরী দায়িত্ব পেয়েছেন। 

পুরোনোরা বহাল যেসব মন্ত্রণালয়ে

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ওবায়দুল কাদের, শিল্প মন্ত্রণালয়ে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসাদুজ্জামান খান দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে মো. তাজুল ইসলাম, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আনিসুল হক, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব পেয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাবেক উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফরহাদ হোসেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে মো. ফরিদুল হক খান পদোন্নতি পেয়ে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

বিদ্যুৎ বিভাগে নসরুল হামিদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জাহিদ ফারুক, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব পেয়েছেন।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জুনাইদ আহমেদ পলক দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি আগেও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

khaleda.jpg
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশান-২ নম্বরের বাসায় ফেরার পথে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ১১ জানুয়ারি ২০২৪ [মেহেদী রানা/বেনারনিউজ]

১৫৭ দিন পর বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া

টানা পাঁচ মাস অর্থাৎ ১৫৭ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ৫টার দিকে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে গুলশানের বাসভবনে পৌঁছান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বেনারকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে গুলশানের বাসায় থেকে ম্যাডাম চিকিৎসা নেবেন।”

শায়রুল বলেন, “গত বছরের ৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে এভারকেয়ার হাসপাতাল ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন। তারপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।”

তালা ভেঙে কার্যালয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা

বিরোধী দলগুলোর দাবি উপেক্ষা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বানরের পিঠা ভাগের’ নির্বাচন নয়, সত্যিকারের ‘গণতান্ত্রিক’ পদ্ধতিতে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

তারই ধারাবাহিকতায় ৭৪ দিন পর ঢাকার নয়াপল্টনে তালা ভেঙে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার সকালে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে একদল নেতা-কর্মী মূল ফটকের তালা ভেঙে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিএনপি নেতা ওমর ফারুক কাউসার বেনারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা ও শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে আয়োজিত মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর থেকে তালাবদ্ধ ছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

দলটির দাবি, ওই ঘটনার পরে পুলিশি অভিযানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৫ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।