মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: দশ দিনের উৎসব শুরু
2021.03.17
ঢাকা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য উদযাপন শুরু করেছে বাংলাদেশ। বুধবার থেকে ‘মুজিব চিরন্তন’ শিরোনামে ১০ দিনের এই অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে।
দেশের ইতিহাসের অনন্য এই উদযাপনে প্রতিবেশী পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীরা সশরীরে যোগ দিচ্ছেন, ভিডিও বার্তা পাঠাবেন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অনেকেই।
মুজিববর্ষের এই উৎসব যখন শুরু হচ্ছে, তখনই সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগ বার্তা দিচ্ছে করোনা পরিস্থিতি অবনতির। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় ছিল তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি; ১ হাজার ৮৬৫ জন।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বুধবার বেনারকে বলেন, “করোনা সংক্রমণের কারণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সব অনুষ্ঠান চলবে।”
“জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানে দিনে সর্বোচ্চ পাঁচশ আমন্ত্রিত অতিথি অংশ নিতে পারবেন। অনুষ্ঠানস্থলে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ রাখতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মুজিব শতবর্ষের জন্য নেওয়া কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে মুজিববর্ষের সময় এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
আসছেন প্রতিবেশী নেতারা
বুধবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। এ ছাড়া ১৯ মার্চ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং ২২ মার্চ নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক আয়োজনে অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন।
একই আয়োজনে যোগ দিতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২৪ ও ২৫ মার্চ বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। আর ২৬ মার্চ সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পর দিন ২৭ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করার কথা রয়েছে তাঁর।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর এটাই হবে মোদির প্রথম বিদেশ সফর।
বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার নরেন্দ্র মোদি এক টুইটে তাঁকে “মানবাধিকার ও স্বাধীনতার রক্ষক’ বলে অভিহিত করেছেন।
“সকল ভারতীয় নাগরিকের কাছেও তিনি একজন বীর হিসেবে গণ্য। এই মাসের শেষের দিকে ঐতিহাসিক মুজিব বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সফর করতে পারা আমার জন্য সম্মানের বিষয়,” টুইটে উল্লেখ করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মহামারির কারণে “এক অস্বাভাবিক সময় পার করছি আমরা,” মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বেনারকে বলেন, “এই কঠিন সময়ে এই সফর দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ নেতাদের বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বের গভীরতা আর আস্থার বহিঃপ্রকাশ।”
এ ছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং স্যু-কুয়েন, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ আহমেদ আল-ওথাইমিন এবং পোপ ফ্রান্সিস ভার্চ্যুয়ালি মুজিব চিরন্তনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং ভিডিও বার্তা পাঠাবেন।

‘পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই’
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, বুধবার বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এ দেশকে আমরা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব। এটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।”
স্বাধীনতার অর্ধশতক পরও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সক্রিয় উল্লেখ করে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করে দেশকে এগিয়ে নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার থিমে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড এলাকায় গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরার পাশাপাশি উন্নয়নের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ঢাকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কমপক্ষে ৫০ হাজার দেশে-বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলী অংশ নিচ্ছেন বলে বেনারকে জানান বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির প্রধান আসাদুজ্জামান নূর।
সারা দেশে উদযাপন
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোর মো. হিরক আহমেদ ৮০ পাউন্ড ওজনের ১২০ ফুট লম্বা একটি কেক তৈরি করেছেন। বলা হচ্ছে, এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কেক।
“আমি একজন দরিদ্র চা বিক্রেতা। আমি সাধ্যমত যতটুকু পেরেছি তা করেছি। এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, আমি বঙ্গবন্ধুর জন্য কিছু একটা করেছি,” টেলিফোনে বেনারকে বলছিলেন হিরক।
বগুড়ার শেরপুরের মাঠে ১০০ বিঘা জমির ধানখেতে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’র প্রতিকৃতি তুলে ধরা হয়েছে। ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০০ মিটার প্রস্থের ক্যানভাসে রংতুলির বদলে শোভা পাচ্ছে দুই রঙের ধানের চারা।
এএফপি জানিয়েছে, এর মধ্যে সবুজ রঙের চারার ধানের নাম ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের হাইব্রিড ‘জনকরাজ’। আর সবুজের ভেতরে ভিন্ন রং ফুটিয়ে তুলতে চীন থেকে আনা হয়েছে বেগুনি রঙের হাইব্রিড জাতের এফ-১ ধান।
শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু তৈরির কাজে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজের একজন ম্যানেজার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, প্রতিকৃতিটি গত মাসে দৃশ্যমান হয়েছিল। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এটা দেখতে ভিড় করে। দেশের বিভিন্ন এলাকা মানুষ আসছে এই শস্যচিত্র দেখতে।”
নিরাপত্তা জোরদার
বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রতিটি ভেন্যু নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে বলে মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।
উদযাপনের এই ১০ দিন সাধারণ জনগণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চলাচল সীমিত রাখার অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি এ সময় রাজধানীতে কোনো ধরনের সভা–সমাবেশ, মিছিল–মিটিং ইত্যাদি আয়োজন না করার জন্যও সকলের প্রতি অনুরোধ জানান আইজিপি।