বিএনপির সমাবেশ: বিদেশ থেকে টেলিফোনে বক্তব্য রাখলেন তারেক রহমান
2023.07.28
ওয়াশিংটন ডিসি
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ঢাকা মহাসমাবেশে হঠাৎ করেই নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রেখেছেন দলটির ‘নির্বাসিত’ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শুক্রবার ঢাকায় আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হঠাৎ করেই নেতা-কর্মীদের এই চমকের কথা জানান।
দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশ ছাড়ার পর প্রথমবারের মতো ঢাকায় কোনো জনসভায় বক্তব্য রাখলেন।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বেনারকে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইনডোর মিটিংয়ে বক্তব্য রাখলেও দেশ ছাড়ার পর কোনো জনসমাবেশে এটিই তারেক রহমানের প্রথম বক্তব্য।
মির্জা ফখরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, “আপনাদের জন্য চমক অপেক্ষা করছে। আপনাদের প্রাণপ্রিয় নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অডিও কলে বক্তব্য রাখবেন।”
এ সময় সমাবেশে উপস্থিতরা তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে লন্ডন থেকে প্রায় আট মিনিটের একটি ফোন কলের মাধ্যমে সমাবেশে যোগ দেন তারেক রহমান। তাঁর বক্তব্য মাইকে প্রচারিত হতে থাকে।
বিএনপির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, তারেক রহমান যখন সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন, তখন হাজার হাজার নেতা-কর্মী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
“প্রিয় বাংলাদেশ, আপনাদের সাথে স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে আমার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ,” এই বলে প্রায় আট মিনিটের বক্তব্য শেষ করেন তারেক রহমান।
দণ্ডিত ও পলাতক থাকায় হাইকোর্ট এক আবেদনের জবাবে তারেক রহমানের বক্তব্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
তবে দলীয় জনসভায় তারেক রহমানের এই বক্তব্য প্রচারের ফলে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে বলে মনে করেন না হাইকোর্টের আইনজীবী তানিম আহমেদ।
তিনি বেনারকে বলেন, “তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশ বা সম্প্রচারে গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।”
এদিকে তারেক রহমানের এই বক্তব্য “কোনো গুরুত্ব বহন করে না” বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।
“তার (তারেক রহমান) মন্তব্য দেশের মানুষের কাছে কোনো অর্থ বহন করে না। যদি তার এত সাহস থাকে, তবে তার এখানে এসে আইনগতভাবে সব কিছুর মুখোমুখি হওয়া উচিত,” বেনারকে বলেন অধ্যাপক হারুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি নিয়ে যাওয়ার পর ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থান করছেন।
“দলের বিশাল সমাবেশে তারেক রহমানের এমন আকস্মিক উপস্থিতি নেতা-কর্মীদের মনে জোর বাড়িয়েছে। আমাদের কর্মীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জীবিত। এই ঘটনা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আমাদের আসন্ন কর্মসূচিকে আরও সংগঠিত করবে,” বেনারকে বলেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী।

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলছেই
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি উভয়েই শুক্রবার ঢাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরত্বে সমাবেশ-মিছিল করেছে।
বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, তাঁদের সমাবেশে উপস্থিতি অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবং প্রায় পাঁচ লাখ লোকের সমাগম ঘটেছে। দুই কিলোমিটারের বেশি রাস্তাজুড়ে সমাবেশ করেছে বিএনপি।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ তাদের 'শান্তি সমাবেশে' কমপক্ষে দুই লাখ লোকের উপস্থিতি দাবি করেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন বেনারকে বলেন, উভয় দলই তাদের কর্মসূচিতে প্রায় এক লাখ করে লোকের সমাগম ঘটিয়েছে।
সমাবেশ থেকে বিএনপি শনিবার ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সমাবেশ থেকে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা না করলেও পরবর্তীতে শনিবার নগরীর প্রবেশ পথে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে বলে ঘোষণা দেয়।
নগরীতে ‘শান্তি সমাবেশ’ শেষে শুক্রবার ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ডিএমপির মতিঝিল জোনের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, “দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়।”
“সংঘর্ষে জড়িত পক্ষগুলোর নাম বা পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি,” বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।