খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে

পুলক ঘটক
2021.09.08
ঢাকা
খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেবার পর বাসায় ফিরে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ১৮ আগস্ট ২০২১।
[বেনারনিউজ]

বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির জন্য তাঁর পরিবারের আবেদন বিবেচনা করতে তা বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

“আমরা নিয়মমাফিক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফাইল পাঠিয়ে দিয়েছি, সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,” বুধবার বেনারকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া আবেদনটি তাঁর মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর “মতামত দিয়ে” তা আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

“এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য তাঁর কার্যালয়ে মতামতসহ আবেদনটি পাঠাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,” জানান আইনমন্ত্রী।

আবেদনপত্রটিতে আইন মন্ত্রণালয় কী মতামত দিয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না বলে আইনমন্ত্রী জানান, “আবেদনে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তাঁর সুচিকিৎসার জন্য মুক্তির প্রার্থনা জানানো হয়েছে।” 

তবে মামলা বিচারাধীন থাকায় খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। বুধবার তিনি বেনারকে বলেন, “দুদকের দায়ের করা মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত। একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সরকার এভাবে মুক্তি দিতে পারে না।”

“একমাত্র রাষ্ট্রপতির আদেশে তিনি মুক্তি পেতে পারেন। এজন্য তাঁকে দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এ ছাড়া তার মুক্তি পাওয়ার বিকল্প উপায় নেই,” বলেন তিনি। 

তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকনের মতে, “সরকার চাইলেই উনাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিতে পারে। তাঁকে মুক্তি দিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।”

“সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় তাঁকে মুক্তি দিয়েছে। ওই আইনে বলা আছে, সরকার যে কোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে শর্ত সাপেক্ষে বা বিনা শর্তে মুক্তি দিতে পারে। সরকার চাইলে শর্ত পরিবর্তনও করতে পারে,” বেনারকে বলেন খোকন।

দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। গত বছরের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান তিনি। এরপর কয়েক দফায় বেড়ে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে তাঁর সাজা স্থগিতের মেয়াদ। এর প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দর কয়েকদিন আগে তাঁর শর্তহীন মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। 

বিএনপির ‘চেষ্টা নাই’

বিশিষ্টজনদের অনেকেরই মতে, বয়স এবং অসুস্থতা বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া উচিত। তবে বিএনপি নেত্রীর মুক্তিতে শুধু সরকারের আনুকূল্য নির্ভরতা বিএনপি’র দুর্বলতার প্রকাশ বলে মনে করেন তাঁরা।

মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বেনারকে বলেন, “এতে সরকারের ক্ষতি হবে না বরং ইমেজ বাড়বে।”

“খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ভালোমন্দের ওপর বিএনপি’র রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকখানি নির্ভরশীল। দলটি যদি আন্দোলনের মাধ্যমে দলের প্রধানকে বের করতে পারত, তাহলে তারা রাজনৈতিকভাবে আরও সবল হতো,” বলেন তিনি। 

বিএনপি’র মিত্র হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দলটির ভূমিকায় বিরক্তি প্রকাশ করে বেনারকে বলেন, বিএনপি “দলের নেত্রীর জন্য আসলে কিছুই করেনি। তারা সরকারের দয়া ভিক্ষা চায়। সরকার দয়া করে মুক্তি দেবে সেই আসায় বসে আছে।”

“বিএনপি না করছে আন্দোলন, না করছে খালেদার মামলাগুলো সঠিকভাবে মোকাবেলা,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া “জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু জামিনের জন্য চেষ্টা নেই। আইনগত অধিকার চাই। আইনগত অধিকার না দিলে আন্দোলন করতে হবে; সেটাও নাই।” 

ভালো নেই খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে ভালো অবস্থায় নেই বলে বুধবার বেনারকে জানিয়েছেন তাঁর বড়ো বোন সেলিমা ইসলাম। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “করোনা থেকে রেহাই পেলেও এখনও তার শরীর খুব দুর্বল। ঠিকমতো খেতে ও হাঁটতে পারেন না। তার হার্ট, কিডনি এবং লিভারে সমস্যা আছে—যা নিয়ে ডাক্তাররা এখনও উদ্বিগ্ন। তাই তাকে বিদেশে নিয়ে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দরকার।” 

শর্তসাপেক্ষে কারামুক্তির পর থেকে ঢাকার গুলশানে তাঁর নিজ বাসভবন ফিরোজাতেই থাকেন খালেদা জিয়া। গত ১৪ এপ্রিল তাঁর করোনা শনাক্ত হলে ২৭ এপ্রিল তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি ৯ মে করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হন। ৫৪ দিন পর হাসপাতাল থেকে গত ১৯ জুন আবার বাসায় ফেরেন। 

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার একটি আদালত। এরপর ৩০ অক্টোবর এ মামলায় আপিলে তাঁর আরো পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে হাইকোর্ট।

একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয় একই আদালত। 

রায় ঘোষণার পর প্রথমে তাঁকে পুরান ঢাকায় অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয় সরকার। কারা তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে মুক্তি পান বেগম জিয়া। 

তাঁকে দেশের অভ্যন্তরে বিশেষায়িত চিকিৎসা নেয়ার শর্তে এই মুক্তি দেয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। পরে পরিবারের আবেদন দেখিয়ে তিন দফায় এই মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়, যা শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।