ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

আহম্মদ ফয়েজ
2023.10.18
ঢাকা
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশের একাংশ। ১৮ অক্টোবর ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

রাজধানীতে প্রধান বিরোধী দলের সমাবেশের আগে ঢাকা ও পাশের জেলায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ দলটির আড়াই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশের আগে নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে ও শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুধু গ্রেপ্তার নয়, সমাবেশে আসার পথে শহরের বিভিন্ন প্রবেশ পথে নেতা-কর্মীদের পুলিশ তল্লাশির নামে হয়রানি করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানান, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ২০২ বিএনপি নেতা-কর্মীকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, বিভিন্ন মামলায় আগে থেকে যাঁরা জড়িত, তাঁদের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

বুধবার সকালে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কাদের এ কথা বলেন।

“ভাঙচুর, অগ্নি-সন্ত্রাস, অস্ত্র ও খুনের মামলায় আগে থেকে যাঁরা জড়িত, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁদের গ্রেপ্তার করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নতুন করে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্দেশ্য সরকারের নেই,” বলেন কাদের।

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ, সরকার পতনে মহাযাত্রা শুরু: বিএনপি

বুধবার ঢাকার জনসভায় বিপুল জনসমাগম ঘটিয়েছে বিএনপি। সমাবেশ দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকালেই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। দুপুরের আগেই কানায় কানায় ভরে যায় নয়াপল্টন ও আশেপাশের এলাকা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, “এখনো সময় আছে, পূজার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেন, স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়বেন নাকি জনগণের আন্দোলনে বিতাড়িত হবেন।”

সরকার পতনের একদফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “এ মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে।”

ইতোমধ্যে ‘মিথ্যা মামলায়’ ৯৬ জন নেতাকে সাজা দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে তাদের সাজা দিতে পারলে মাঠ পরিষ্কার। এরা ক্ষমতায় থাকলে শুধু রাজনীতি নয়, দেশ রসাতলে যাবে।”

দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না দাবি করে তিনি বলেন, “রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পাঁচ বছরে একদিনই জনগণ ভোটের অধিকার পায়। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সে অধিকার কেড়ে নিয়েছে, এ সরকারের কোনো ভিত্তি নেই।”

“এখনো বলছি, মানে মানে ক্ষমতা ছাড়ুন,” ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন ফখরুল।

IMG_0848.jpg
ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আয়োজিত সমাবেশের একাংশ। ১৮ অক্টোবর ২০২৩। [বেনারনিউজ]

কাদেরের ‘শেষ বার্তা’

এদিকে বিএনপির সমাবেশস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।

কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর ওই সমাবেশ থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে “মির্জা ফখরুল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে, আমাদের ধমক দেন, ভয় দেখান,” উল্লেখ করে কাদের বলেন “আমিও বার্তা দিয়ে দিচ্ছি, শেষ বার্তা—আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচনী সরকারের প্রধান থাকবেন।”

নির্বাচনে জনগণের ভোটে শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন দাবি করে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা কোন দোষে পদত্যাগ করবেন?”

বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক আজিমপুরে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে। ওইটা আর ফিরে আসবে না।”

বিএনপি আন্দোলন করলে তার পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে কাদের বলেন, “অবরোধ করলে পাল্টা অবরোধ। দাঁড়াতে দেবো না।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।