গণহত্যার দায়ে এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ
2024.10.17
ঢাকা

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গণহত্যার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত ও অন্যান্য দলগুলোর নেতাদের বিচারের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে নতুন আইন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। যুদ্ধাপরাধ এবং দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে জামায়াত-বিএনপির প্রায় এক ডজন নেতার ফাঁসি হয়।
সেই ট্রাইব্যুনালেই বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন শেখ হাসিনা।
গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শুনানিতে দুটি অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
“নতুন বাংলাদেশের ইতিহাসে আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে,” উল্লেখ করে তাজুল সাংবাদিকদের বলেন, “জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যার বিস্তারিত বিবরণ এবং একইসঙ্গে কীভাবে এই সরকার দানবীয় সরকারে পরিণত হলো এবং নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্রদের গুলি করে মারল- সেসব প্রেক্ষাপট আদালতে তুলে ধরা হয়েছে।”
এই অপরাধগুলো বিস্তৃত মাত্রায়, সারাদেশে সংঘটিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে তাজুল বলেন, “আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম এই অপরাধের আসামি যাঁরা, তাঁরা অসম্ভব রকমের প্রভাবশালী, তাঁদের গ্রেপ্তার করা না হলে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অসম্ভব কঠিন।”
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬৪টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
বিচার শুরুর দিনে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় নিহত চিকিৎসক সজীব সরকারের বোন সুমাইয়া সরকার স্বর্ণা। তিনি বেনারকে বলেন, “আমি আমার ভাইসহ গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সকলের বিচার চাই। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয় যে মানুষগুলো অকালে প্রাণ দিয়েছে, তারা যেন ন্যায় বিচার পায়।”

শেখ হাসিনাকে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
বাসস জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আদালত একমাস সময় দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তাঁকে ফেরত আনার জন্য যা যা প্রয়োজন সেটি অবশ্যই আমরা করব।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সরকার পতনের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আরও কয়েকজনের বিচার ট্রাইব্যুনালে চলমান ছিল।

প্রশ্নের মুখে চিফ প্রসিকিউটর
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। এই ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অনেকের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে, যাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। এসব নেতাদের আইনজীবী হিসেবে মামলা লড়েছেন বর্তমান বর্তমান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল আমিন বেনারকে বলেন, বর্তমান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন।
“তাঁর একই ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হতে কোনো আইনি বাধা নেই। তবে তিনি চিফ প্রসিকিউটরের দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পালন করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে,” বলেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বেনারকে বলেন, “বর্তমান চিফ প্রসিকিউটর (তাজুল ইসলাম) ছিলেন শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের আইনজীবী, একই ব্যক্তি এখন এই ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর, যারা শেখ হাসিনা ও অন্যদের বিচার করবে। এটা স্বার্থের সংঘাত।”
শেখ হাসিনা এখনও ভারতে: নয়াদিল্লী
শেখ হাসিনা এখনও ভারতে আছেন বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দিন আবারও শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের বিষয়টি জানাল নয়াদিল্লী।
তবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা এ বিষয়ক কিছু প্রতিবেদন দেখেছি। কিন্তু আমার বলার কিছু নেই।”
মুখপাত্র বলেন, “শেখ হাসিনা নিরাপত্তার কারণে স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারতে এসেছিলেন এবং তিনি ভারতে থাকবেন।”