ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.08.10
ঢাকা
ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে ঢাকার মতিঝিল এলাকায় রাস্তার পাশে বসানো কয়েকটি ছোট আকারের সোলার প্যানেল। ২২ জানুয়ারি ২০১৭।
[বেনারনিউজ]

চীনের পর এবার ভারতের সাথে সরকারি পর্যায়ে একটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। 

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ভারতের আর্থিক সহায়তায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়া হয় বলে বেনারকে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান।

প্রকল্পটি জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে বলে জানান তিনি। বাস্তবায়িত হলে এটিই হবে সরকারি পর্যায়ে এবং ভারতীয় অর্থায়নে সর্ববৃহৎ উৎপাদন ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। 

বেনারের হাতে আসা প্রকল্পটির বিবরণী অনুযায়ী, এর মোট খরচ ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৫১২ কোটি টাকা।

মোট অর্থের মধ্যে ভারতীয় ঋণ প্রায় এক হাজার ১১৬ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশ সরকার বাকি অর্থ সরবরাহ করবে। 

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ দেখানো রয়েছে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। সেই হিসাবে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। 

জামালপুরের জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান সোমবার বেনারকে বলেন, “মাদারগঞ্জে ভারতীয় অর্থায়নে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাস্তবায়নের জন্য দুই মাস আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২৫ একর জমি বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে দীর্ঘ মেয়াদে লিজ দেয়া হয়েছে।” 

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ‘বিকল্প’ নেই

বর্তমানে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট’র (সিএমসি) সহায়তায় সিরাজগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ২০২২ সালের জুন মাসে এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার কথা। 

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে সিএমসি এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনা প্রতিষ্ঠান জেডটিই এর সহায়তায় রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় সাত দশমিক চার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশের জ্বালানি খাত মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও তেলের ওপর নির্ভরশীল।

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এই জীবাশ্ম জ্বালানীর ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। 

২০০৯ সালে নেয়া জ্বালানি নীতি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুতের শতকরা পাঁচ ভাগ এবং ২০২০ সাল নাগাদ শতকরা ১০ ভাগ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ। তবে সরকারের সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস হতে মোট বিদ্যুতের শতকরা ১৫ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে মেটানোর লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।

সরকারি হিসাবে বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রায় শতকরা চার ভাগ বিদ্যুৎ আসে, যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে প্রকৃত হার শতকরা এক ভাগের মতো।

“নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। আমরা আশা করছি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে,” বেনারকে বলেন মোহাম্মদ হোসাইন।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে সৌরবিদ্যুৎ খাতে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, বাংলাদেশে বায়ু, জলবিদ্যুৎসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎসের তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। 

অধ্যাপক তামিম বলেন, “চীনারা সোলার প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত। চীনা কোম্পানিগুলোর সহায়তায় সরকার বিভিন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে সোলার প্যানেলের দাম কমে এসেছে। সুতরাং, বাংলাদেশ সৌর বিদ্যুতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে।” 

তিনি বলেন, “তবে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের অন্যতম সমস্যা হলো, এর জন্য অনেক জমি দরকার হয়। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ব্যাপক আকারে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব।” 

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বেনারকে বলেন, “আমাদেরকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যেতেই হবে। এর কোনো বিকল্প আমাদের কাছে নেই। সে কারণে সরকার চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে কাজ করছে।” 

তিনি বলেন, “চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সোলার প্যানেল উৎপাদনকারী দেশ। তবে ভারতও এই প্রযুক্তিতে পিছিয়ে নেই। তারা এক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে পারবে।” 

শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, “আজকের একনেকে ভারতীয় অর্থায়নে যে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে সেটি অনেক বড়ো প্রকল্প। এটি প্রকৃতপক্ষে জামালপুরের চরাঞ্চলে বাস্তবায়িত হবে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এ ধরনের বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।