বিএসএফের হাতে আটক র্যাবের তিন সদস্য, পতাকা বৈঠকে মুক্ত
2019.10.10
ঢাকা
মাদক ধরতে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী–বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের তিন সদস্য ও তাদের দুই সোর্স।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির বেনারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার সীমান্ত এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। আটক র্যাব সদস্যরা হলেন: রিগান বড়ুয়া, আবদুল মতিন, আবদুল ওয়াহেদ ও তাদের দুই নারী সোর্স।
বিএসএফের হাতে র্যাব সদস্য আটকের ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মুহিতুল ইসলামের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ২৪ এর খবরে বলা হয় বলেন, “মাদক চোরাকারবারীদের ধাওয়ার এক পর্যায়ে র্যাবের কয়েকজন সদস্য ‘অসাবধানতাবশত’ ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েন। এরপর ভারতীয় নাগরিকেরা র্যাবের তিন সদস্য এবং তাদের সঙ্গে থাকা দুই নারী সোর্সকে বেধড়ক মারধর করে। ব্যবহৃত একটি পিস্তল ও অন্যান্য সামগ্রীসহ র্যাব সদস্যদের বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, র্যাব সদস্যদের সীমান্তের ওপারে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁদের মারধর করার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
র্যাবের মিডিয়া শাখার প্রধান সারোয়ার বিন কাশেম বেনারকে জানান, ভুল করে ব্রাহ্মণপাড়া সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন র্যাবের ওই তিন সদস্য ও তাদের দুই সোর্স।
তিনি আরও জানান, তাদের আটকের খবর পেয়ে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে হাজির হন। প্রায় আট ঘন্টা আটক থাকার পর বিকেলে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর তাদের বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়।
আটক হওয়া সদস্যরা র্যাব–১১ এর সদস্য বলে জানান শাহজাহান।
কি ঘটেছিল?
র্যাব মূখপাত্র সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ব্রাহ্মণপাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রচুর ফেনসিডিল বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ ও ভারত—দুই অংশের চোরাকারবারিদের মধ্যে নেটওয়ার্ক রয়েছে।
ফেনসিডিল চোরাচালানীদের ধরতে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আশাবাড়ি সীমান্ত এলাকায় যায় তিন র্যাব সদস্য এবং তাদের দুই নারী সোর্স।
তিনি বলেন, “কিন্তু তারা ভুল করে ভারতীয় ভূখন্ডে ঢুকে পড়ে। এরই মধ্যে চোরাকারবারীরা বিএসএফ সদস্যদের খবর দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেয়।”
র্যাব মুখপাত্র সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, “দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর বৃহম্পতিবার বিকাল পাঁচটার দিকে আটককৃতদের বাংলাদেশে ফেরত দেয় বিএসএফ। তারা সুস্থ আছে।”
তিনি বলেন, ওই চোরাকারবারিদের ধরতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হক বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকার এমন কিছু অংশ আছে, যে সেটি কোন দেশের তা বোঝা যায় না। সে কারণে হয়তো র্যাব সদস্যরা না বুঝে ভারতীয় ভূখন্ডে প্রবেশ করেছে।”
তিনি বলেন, “অতীতে ভারতের সদস্যরাও ভুল করে বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করেছে। পরে আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফেরত দেয়া হয়েছে।”
শহিদুল হক বলেন, “সীমান্ত এলাকার আট কিলোমিটার অথবা পাঁচ মাইল এলাকার মধ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক, অস্ত্র চোরাচালান ও অন্যান্য বেআইনি কাজ বন্ধের দায়িত্ব আধাসামরিক বাহিনী বিজিবির। তবে র্যাব-পুলিশ যে প্রয়োজনে যেতে পারবে না-এমন কথা নেই।”
তিনি বলেন, “র্যাব সদস্যরা অভিযান পরিচালনার আগে বিজিবির সাথে সমন্বয় করে অপারেশনে গেলে হয়তো এমন সমস্যা হতো না।”
শহিদুল হক আরও বলেন, কুমিল্লা সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারত-দুই পাশেই চোরাকারবারিদের তৎপরতা রয়েছে। সুতরাং, ওইসব এলাকায় অভিযানের ব্যাপারে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
তিনি বলেন, “ভারতীয় বিএসএফের সাথে আমাদের বিজিবি’র সম্পর্ক অনেক সহযোগিতাপূর্ণ। তাদের মধ্যে নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান চলে, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় হয়।”
সুতরাং, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান করার জন্য বিজিবি এবং বিএসএফকে সমন্বয় করা দরকার, যাতে অপরাধীরা পালিয়ে কোনও দিকে যেতে না পারে।
গত মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত এলাকায় মাদক, অস্ত্র ও অন্যান্য নিষিদ্ধ বস্তুর চোরাচালান ও মানব পাচারসহ সকল অপরাধ বন্ধ করতে কাজ করার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করা হয়।