ঢাকায় ধর্ষণের পর হত্যা: স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামি গ্রেপ্তার

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.01.08
ঢাকা
ঢাকায় ধর্ষণের পর হত্যা: স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামি গ্রেপ্তার ঢাকার কলাবাগানে অপ্রাপ্তবয়স্ক এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে অভিযুক্ত দিহানকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করে পুলিশ। ৮ জানুয়ারি ২০২০।
[ফোকাস বাংলা]

ঢাকায় ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল পড়ুয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে এক ছাত্রকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত তরুণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহান (১৮) বাবা-মার অনুপস্থিতির সুযোগে ওই ছাত্রীকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কলাবাগানে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই ছাত্রীকে দিহান নিজেই হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ.ফ.ম. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় যোগাযোগ করে জানায়, এক তরুণ রক্তাক্ত অবস্থায় এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে এসেছেন।

পরে সেখানে গিয়ে দিহানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জানিয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ভিকটিমের মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকেরা।

“আলামত অনুযায়ী, জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কারণে ভিকটিমের রক্তক্ষরণ শুরু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে,” জানান আসাদুজ্জামান। 

এদিকে পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) জাফর হাসান বেনারকে জানান, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিহতের সাথে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক থাকার দাবি করেছেন দিহান।

তিনি বলেন, “দিহান জানিয়েছে, নিহত ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর প্রণয় ছিল। এবং দুজনের সম্মতিতেই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।”

শুক্রবার দিহানকে আদালতে হাজির করা হলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁকে বিচারক কারাগারে পাঠান বলেও জানান জাফর হাসান।

বাংলাদেশের আইনে ১৮ বছরের কম বয়েসি কোনো মেয়ের সাথে সম্মতির ভিত্তিতে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ দৈহিক সম্পর্ক করলেও তা ধর্ষণ বলে গণ্য হয়।

“দিহানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ গঠন করা যাবে। কারণ সে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। কিন্তু মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক নয়,” বেনারকে বলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। 

বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা দুই অপরাধেরই সাজা মৃত্যুদণ্ড। এই আইনমতে, ধর্ষণের শিকার কোনো নারী-শিশুর নাম, পরিচয় বা ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করাও নিষিদ্ধ। 

নিহত মেয়েটির বাবা একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও মা ঢাকার সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করেন। কলাবাগান থানায় দিহানকে একমাত্র আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন নিহতের পিতা। 

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৬২৭ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৩ জন।

এর আগের বছর ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক হাজার ৪১৩ নারী এবং ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।