আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিবেদন: মহামারিকালে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছে সরকার

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.01.13
ঢাকা
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিবেদন: মহামারিকালে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের সমাবেশ। ১১ অক্টোবর ২০১৮।
[রয়টার্স]

করোনাভাইরাস মহামারিকে কাজে লাগিয়ে সরকার বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করছে এবং সমালোচক ও বিরোধীদের ওপর চড়াও হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

তবে এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই বলে বেনারকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। 

বুধবার প্রকাশিত সারা বিশ্বের ২০২০ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি ২০২১ সালের প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে এইসব অভিযোগ করে এইচআরডব্লিউ। 

এতে বলা হয় গত বছর ২০১৮ সালে প্রবর্তিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আইনের আওতায় ২০২০ সালের মে মাসে করোনা মহামারি ও সরকারের নীতি নিয়ে সমালোচনা করার অপরাধে সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আটক করা হয়। 

সাতশ ৬১ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে একশ'টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

সংস্থাটির এশিয়া ডেস্কের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, “২০২০ সালের বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও আওয়ামী লীগ সরকার দেখিয়েছে যে, তারা স্বৈরতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ কিছুতেই ছাড়বে না।” 

তিনি বলেন, “এই মহামারির মধ্যে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করা কার্টুনিস্ট ও শিশুদের নিয়ে শঙ্কিত হওয়া বন্ধ করে সরকারের উচিত ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে ভাবা।”

মহামারিকালে সরকার বেশ কিছু ওয়েবভিত্তিক গণমাধ্যম ব্লক করেছে বলেও অভিযোগ করা হয় প্রতিবেদনে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে জানানো হয়, মহামারিকালে ফটোগ্রাফার শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ হন। তারপর তাঁকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আটক রাখা হয়। এছাড়া ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করার দায়ে একজন কিশোরকেও এই সময় আটক করা হয়। 

এছাড়া ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠীর সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী মাইকেল চাকমা নিখোঁজ হওয়ার দুই বছর পার হয়ে গেছে। তাঁকে খুঁজে বের করতে দেশের উচ্চ আদালত, মানবাধিকার কমিশন ও জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি আবেদন জানালেও সরকার তা করেনি বলে অভিযোগ করা হয় প্রতিবেদনে। 

গৎবাঁধা অভিযোগ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমখুন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবার “একই ধরনের গৎবাঁধা অভিযোগ করে আসছে,” বলে প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

“এগুলোর সত্যতা নেই,” জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকত তাহলে দেশে ৫০টির বেশি টিভি চ্যানেল, হাজার হাজার সংবাদপত্র, শত শত অনলাইন কাজ করছে কীভাবে?” 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, “সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছে। আর এজন্য নিরাপদ ডিজিটাল জগত দরকার। এই জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন আছে।”

“যদি কেউ এই আইন লঙ্ঘন করে, সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে,” যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 

তবে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদনগুলো “বাস্তবসম্মত ও তথ্যভিত্তিক” হয় বলে মন্তব্য করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান।

“এটি সত্য যে আমাদের মতো দুর্বল গণতান্ত্রিক কাঠামোর দেশগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়, বিরোধীদল ও মতকে নিষ্পেষণ করা হয়। আবার সরকারগুলো এগুলো অস্বীকার করে, বলে, কিছুই হয়নি।”

তবে তাঁর মতে বাংলাদেশের মতো “ছোট দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টির সময় এখন নয়” বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে নজর দেয়া।”

“আমেরিকায় যদি মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করা যায় তাহলে অনুন্নত দেশগুলোতে পরিস্থিতি উন্নতি করার জন্য সরকারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে,” বলেন ড. মিজান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।