রাশিয়া থেকে তিন লাখ টন গম আমদানি করবে বাংলাদেশ

কামরান রেজা চৌধুরী
2022.08.22
ঢাকা
রাশিয়া থেকে তিন লাখ টন গম আমদানি করবে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলী নদী পারের বহির্নোঙ্গর থেকে আমদানি করা গম ঘাটে নামাচ্ছেন শ্রমিকরা। ২৩ জুন ২০২২ ।
[বেনারনিউজ]

রাশিয়া থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে রাশিয়া বাংলাদেশে গম বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টেটস্কি গত সপ্তাহে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সাথে দেখা করে গম রপ্তানির ব্যাপারে তাঁর সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের বিষয়টি অবহিত করেন।

বেনারের কাছে সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাদ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সংকট মেটাতে সরকার তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল আমদানি করছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরের মধ্যে মন্ত্রী রাশিয়া থেকে গম কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করলেন।

“গত সপ্তাহে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আমার সাথে দেখা করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া আমাদের কাছে কমপক্ষে তিন লাখ মেট্রিক টন গম রপ্তানি করবে,” সোমবার বেনারকে বলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

তিনি বলেন, “আমরাও রাশিয়া থেকে গম আমদানি করতে চাই। গমের দাম ঠিক করা, মূল্য পরিশোধ প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যে রাশিয়া সরকারের প্রতিনিধিরা আমাদের সাথে আলোচনায় বসবে।”

রাশিয়া থেকে গম কেনার ব্যাপারে “কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা নেই,” জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমার থেকেও গম আমদানির ব্যাপারে বাংলাদেশ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ঢাকাস্থ রাশিয়া দূতাবাসে ই-মেইল পাঠানো হলেও জবাব পাওয়া যায়নি।

কৃষি প্রধান বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে অন্যতম দেশ হলেও গম উৎপাদন তেমন হয় না। জাতিসংঘের কৃষি সংস্থার হিসাবে, বাংলাদেশ বিশ্বের মোট সাত ভাগের মতো ধান উৎপাদন করে।

সরকারি হিসাবে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮০ লাখ মেট্রিকটন গমের চাহিদার মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় ১০ লাখ মেট্রিক টনের কিছু বেশি। গমের বাকি চাহিদা আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়।

বাংলাদেশ মূলত রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করত। তবে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে সেখান থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে গম ও আটার সংকট শুরু হয়।

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর আগে দুই কেজি প্যাকেট আটার দাম ছিল ৭০ টাকা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেই আটার খুচরা দাম ১২০ টাকায় চলে গেছে।

সম্প্রতি তুরস্কের মধ্যস্থতায় খাদ্যশস্য রপ্তানির ব্যাপারে রাশিয়া ও ইউক্রেন সমঝোতা হওয়ায় গম ও আটার দাম কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জ্বালানি আমদানিকারক দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের শতকরা ৬৫ ভাগের বেশি আসে গ্যাস থেকে।

এই যুদ্ধের কারণে তেল ও তরলীকৃত গ্যাসের দাম বেড়েছে দশগুণের বেশি। বন্ধ হয়ে গেছে তরলীকৃত জ্বালানি (এলএনজি)। এর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশে চলছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে “মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত,” বলে সোমবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মবিন চৌধুরী।

যুদ্ধের ফলে দেশে খাদ্যদ্রব্য ও তেলের দাম বেড়েছে জানিয়ে শমশের মবিন চৌধুরী বলেন, “আমাদের এখন খাদ্যশস্য ও জ্বালানি তেল আমদানি করতে হবে। সেটি রাশিয়া থেকে হলেও করতে হবে।”

তিনি বলেন, “রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। আমেরিকাসহ কিছু পশ্চিমা দেশ দিয়েছে। সুতরাং, আমরা রাশিয়া থেকে খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানি তেল আমদানি করলে হয়তো পশ্চিমা দেশগুলো নাখোশ হবে। কিন্তু বাংলাদেশকে তাদের বোঝাতে হবে যে বাংলাদেশ এই যুদ্ধের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ।”

“যেসব দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারাও কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে ভারত।”

ভারতের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল আমদানি সংক্রান্ত স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ব্যাপারে সরকারের মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আসলাম উদ্দিন সোমবার বেনারকে বলেন, “এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। তবে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।