বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাই: মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে দস্যুরা
2024.03.20
ঢাকা

বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইর নয় দিন পর মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে জলদস্যুরা।
“বুধবার সকালে দস্যুরা সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে,” বেনারকে বলেন ছিনতাই হওয়া জাহাজ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর মালিক এসআর শিপিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম।
তবে ছিনতাইকারীরা মুক্তিপণ চেয়েছে কি না সে তথ্য জানাতে রাজি হননি মেহেরুল।
এদিকে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “জিম্মি নাবিক ও ক্রুদের উদ্ধারে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। দ্রুতই তাঁদের উদ্ধার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) পক্ষ থেকে মালিকপক্ষের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, “জলদস্যুরা যোগাযোগ শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগির সুফল আসবে।”
জাহাজটির বর্তমান অবস্থান সোমালিয়ার গারাকাদ বন্দরের উত্তরে বলে বেনারকে জানান বিএমএমওএ সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “জাহাজটি গত শনিবার দস্যুদের নিয়ন্ত্রিত জলসীমায় নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত সেই অবস্থানেই আছে।”
অভিযানে সম্মত নয় বাংলাদেশ
জিম্মিদের জীবন যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে সে জন্য আন্তর্জাতিক কোনো পক্ষের উদ্ধার অভিযানে মালিকপক্ষ সায় দেয়নি বলে জানান মাকসুদ। তিনি বলেন, “বাইরের কোনো পক্ষের কোনো ধরনের অভিযানে আমরা সম্মত হইনি।”
দস্যুরা যোগাযোগ করেছে শুনেছেন জানিয়ে জিম্মি জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ খানের শ্বশুর মোহাম্মদ ফরিদ বেনারকে বলেন, “এটি ইতিবাচক খবর। আশা করছি এখন আলোচনার পথ তৈরি হবে।”
আতিক উল্লাহ “সর্বশেষ দুই-তিন দিন আগে” তাঁদের সাথে যোগাযোগ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ছিনতাইকারীরা “ প্রথম কয়েক দিন স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করতে দিলেও এখন আর দিচ্ছে না। কারণ তাদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে; কোনোভাবে এই যোগাযোগের কারণে তারা বিপদে পড়ে কি না।”
তিনি বলেন, “জাহাজের কাছাকাছি এলাকা দিয়ে একটি উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টার গেলেও দস্যুরা খুবই সতর্ক হয়ে যায় বলে সর্বশেষ জানিয়েছিল আতিক।”
আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল গভীর সমুদ্রে দস্যুরা জাহাজটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। জিম্মি হন নাবিক ও ক্রুসহ ২৩ বাংলাদেশি।
এরপর থেকে কেউ কেউ মাঝে মাঝে যোগাযোগ করলেও দস্যুদের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ না করায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
দ্রুত সমাধানের আশা
আনাম চৌধুরী বেনারকে বলেন, “তাদের যোগাযোগের মধ্য দিয়ে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত হলো। মুক্তিপণ বা দাবি থাকলে দস্যুরা তা জানাবে, এই পক্ষ থেকে আলোচনা করবে। এরপর একটি জায়গায় গিয়ে সমাধানের পথ খুলবে।”
তিনি বলেন, “সাধারণত উভয়পক্ষই তাদের অভিজ্ঞ দলের মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে নেয় এবং আলোচনা হয় শুধুমাত্র মালিকপক্ষের সঙ্গে।”
মাকসুদ আলম বলেন, “পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বিতভাবে হচ্ছে। এককভাবে মালিকপক্ষ বা সরকার নয়, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বয়ে সমাধান প্রক্রিয়া এগোচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাইরের বা ভেতরের কেউ যদি এর মধ্যে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি না করে, তাহলে আমরা আশাবাদী দ্রুতই চলমান প্রক্রিয়ায় এটি সমাধান করা সম্ভব হবে।”
তবে কত দিনের মধ্যে সমাধান হতে পারে, সে ব্যাপারে সরকার, মালিকপক্ষ বা বিশেষজ্ঞরা কোনো ধারণা করতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১৪ বছর আগে একই কোম্পানির মালিকানাধীন জাহান মনি নামে আরেকটি জাহাজ আকরিক লোহা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে গ্রিসে যাওয়ার পথে দস্যুদের কবলে পড়েছিল। সে সময় ২৬ জন জিম্মিসহ জাহাজটি ছাড়িয়ে আনতে তিন মাসের বেশি সময় লেগেছিল।
খাবার ও পানি শেষ হওয়ার পথে
“জাহাজে খাবার সীমিত” জানিয়ে আতিকের বরাত দিয়ে ফরিদ বলেন, “তাদের খাবার দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। কারণ দস্যুরা তাদের নিজেদের খাবার ছাড়াও জাহাজের খাবার খাচ্ছে। ফলে আপাতত তাদের একবেলা খেয়ে কাটাতে হচ্ছে। পানিও শেষের দিকে।”
তবে আনাম জানান, “একটা জাহাজে সাধারণত দুই থেকে তিন মাসের শুকনো খাবার থাকে। ফলে ফ্রেশ খাবার শেষ হলেও নাবিক ও ক্রুদের চালিয়ে নিতে পারার কথা।”
“খাবার নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা না থাকলেও মিঠা পানির প্রাপ্যতা নিয়ে সমস্যা হবে,” বলেন তিনি।