বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ, চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালত
2021.10.01
ঢাকা

বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার করা যাবে না—সরকারের এই ঘোষণার পর শুক্রবার থেকে ভারতীয়সহ সকল বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবেশক ও কেবল অপারেটররা। টেলিভিশনের পর্দাজুড়ে এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে কেবল অপারেটরেরা দর্শকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রুজিনা সুলতানা শুক্রবার বেনারকে জানিয়েছেন, বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা হচ্ছে কি না, তা জানতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে সরকার।
শুক্রবার বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করায় জরিমানা করা হয়েছে বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর অন্যতম পরিবেশক যাদু ভিশন লিমিটেডকে।
কারিগরি ভাষায় বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠানকে ‘ক্লিনফিড’ বলা হয়। কেবল নেটওয়ার্ক অপারেটর আইন-২০০৬ অনুযায়ী বিদেশি কোনো চ্যানেল বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারবে না। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে আসছিল। এই প্রথমবারের মতো ক্লিনফিড অনুষ্ঠান প্রচারে বিদেশি চ্যানেলগুলোকে বাধ্য করতে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার।
চট্টগ্রামভিত্তিক কেবল অপারেটর মাল্টিচ্যানেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কেবল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মাসুদ বেনারকে বলেন, “আমাদের অফিসেও শুক্রবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। তবে তাঁরা কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। আমরা গতকালই সরকারকে জানিয়েছি, আমরা দেশের আইন মেনে কাজ করব। শুক্রবার থেকে ক্লিনফিড প্রচার করব।”
“বর্তমানে বাংলাদেশের চ্যানেল ছাড়া কোনো বিদেশি চ্যানেল আমরা দেখাচ্ছি না,” জানিয়ে তিনি বলেন, “ভারতীয় ছাড়াও সিএনএন, বিবিসিও কখনও কখনও ছোট করে কোনো হোটেল অথবা বিমান সংস্থার অথবা অন্য কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে।”
“আমরা বাংলাদেশে পে-চ্যানেল এবং ফ্রি-টু-এয়ার মিলিয়ে প্রায় তিনশোর বেশি চ্যানেল দেখাই। বর্তমানে সব চ্যানেল প্রচার বন্ধ করে দিয়েছি,” বলেন মাসুদ।
এদিকে “শুধু ঢাকা নয়, আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত শুক্রবার থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহসহ সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করেছে,” বলে শুক্রবার বেনারকে জানান তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রুজিনা সুলতানা।
অভিযান চলাকালে “অনেক ডিস্ট্রিবিউটর ও কেবল অপারেটরদের” জরিমানা করা হয়েছে জানালেও ঠিক কয়টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে সেব্যাপারে “এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না,” বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকায় যাদু ভিশন লিমিটেড এবং ওয়ান অ্যালায়েন্স লিমিটেডের অফিসে মোবাইল কোর্টে অংশ নিয়েছেন জানিয়ে শুক্রবার অভিযান পরিচালনাকারী তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামসুর রহমান বেনারকে বলেন, “যাদু ভিশনকে আমরা সতর্ক করে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছি।”
“কারণ তারা শুক্রবার সকালে একটি বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপনসহ দেখিয়েছে। সেই সম্প্রচারের একটি ভিডিও ক্লিপ আমদের কাছে ছিল। এছাড়াও, তারা সরকার নির্ধারিত চ্যানেলগুলোর যে সিরিয়াল নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটি ভঙ্গ করেছে। সেকারণে তাদের জরিমানা করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় সাংবাদিকেরা উপস্থিত থাকলেও তাঁদের সাথে কোনো কথা বলেননি যাদু ভিশন লিমিটেডের কর্মকর্তারা।
‘টেলিভিশন অন নেই, কোনো শব্দ নেই’
ভারতের জি বাংলার নিয়মিত দর্শক ও ঢাকার তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা নাজনীন সুলতানা বেনারকে বলেন, “শুক্রবার থেকে ভারতীয় চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে না। সেকারণে অনেক মানুষ টিভি দেখছেন না বলে আমার মনে হয়।”
তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুর থেকে তাঁর প্রতিবেশী কোনো বাসায় “টেলিভিশন অন নেই, কোনো শব্দ নেই, কোনো গান নেই।”
তাঁর মতে, “সব বিদেশি চ্যানেল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া ঠিক না। বিদেশি চ্যানেলগুলোর উচিত বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠানমালা প্রচার অব্যাহত রাখা।”
পল্লবী এলাকার গার্ড জাকির হোসেন শুক্রবার বেনারকে বলেন, “কাজ কমে আসলে, বিকাল থেকে গেটে বসে ভারতীয় নাটক বা সিনেমা দেখতাম। আজ থেকে কিছু দেখা যাচ্ছে না। জানি না কেন বন্ধ হয়েছে।”
দেশি চ্যানেলগুলোর জন্য ‘একটি সুযোগ’
সরকার কোনো বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করতে বলেনি বরং বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান প্রচার করতে বললেও কেবল অপারেটররা সকল বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে বলে শুক্রবার বেনারকে জানান ষ্পাইস টিভির অপারেশন পরিচালক মোহাম্মদ আক্তার হোসেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান পাঠাচ্ছেন না।”
তিনি বলেন, “বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান প্রচার করলে পরিবেশক ও কেবল অপারেটরদের লাভ কমে যায়। তাই তারা বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান প্রচার করতে আগ্রহী নয়। তবে তারা তো আইনের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না।”
“সে কারণে তারা সব চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো, তারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়। তাদের কৌশল হলো, মানুষ যাতে সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে কথা বলে এবং সরকার যাতে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে,” বলেন আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, “তবে এটি বাংলাদেশি চ্যানেল এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের জন্য একটি সুযোগ। আমাদের চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানের মান বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে মানুষ আমাদের চ্যানেলগুলো দেখে। তা ছাড়া বিজ্ঞাপন বিরতি কমাতে হবে।”
“বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়ায় দেশি চ্যানেলগুলো কম বিজ্ঞাপন পায়, আবার রেটও তুলনামূলক অনেক কম। তাই টিকে থাকতে তাদের বেশি বিজ্ঞাপন বিরতি দিতে হয়,” বলেন তিনি।