মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানালেন, জবাবদিহি নিশ্চিত না করলে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই
2022.04.25
ঢাকা
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বারবার ঢাকার আহ্বান সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়েছে যে, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা ছাড়া এটি প্রত্যাহার করার কোনো সুযোগ নেই।
রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, “আমি স্পষ্টত বলতে চাই র্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ রয়েছে, তার সুরাহার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ এবং বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।”
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি র্যাব চাই যারা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে যেমন কঠোর থাকবে, তেমনি কঠোর থাকবে মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে।”
ঢাকায় আসার পর র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এটাই রাষ্ট্রদূত হাসের প্রকাশ্যে প্রথম মন্তব্য।
“তবে র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মানে এই নয় যে, আমরা জোরদার আইন প্রয়োগ বিষয়ে আমাদের ইতিমধ্যে স্থাপিত শক্তিশালী নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে পারব না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাব,” বলেন পিটার হাস।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে আসছে বাংলাদেশ সরকার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, “সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য অনুযায়ী র্যাব বাংলাদেশের এফবিআই। তাদের জবাবদিহির বিষয়ে আমি একমত। তবে এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোতেও স্থিতিশীলতা এনেছে।”
একই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন উপস্থিত ছিলেন। পিটার হাসের আগে র্যাবের কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন আল-মামুন।
তিনি বলেন, “আমরা সফলভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদ মোকাবেলা করেছি, মাদক নির্মূলে, মানব পাচার ও অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করেছি।”
“আমরা মূলত সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করি, যে দুটি যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারমূলক কাজের অংশ। মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং এলিট ফোর্সের সাবলীল কার্যক্রমের স্বার্থে আমরা পারস্পরিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চাই।”
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বেনারকে বলেন, “র্যাবের সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলেই যে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দেবে তেমনটি তো যুক্তরাষ্ট্র বলছে না। তবে এখন আমাদের উচিত বিচারবহির্ভূত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা।”
“এমনিতেই দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম কমতে শুরু করেছে। তবে সেটা আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলেই কিন্তু নয়। দেশের মধ্যেই প্রচুর সমালোচনা শুরু হওয়ায় এটা কমতে শুরু করে,” বলেন তিনি।
নির্বাচনে পক্ষ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমি স্পষ্ট করেই বলছি, আগামী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ বেছে নেবে না। আমরা শুধু এমন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আশা করি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কে দেশ পরিচালনা করবে।”
আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানানো নিয়ে সন্তোষ করেনে পিটার হাস।
“আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধু নির্বাচনের দিন ভোটদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য আবশ্যক হলো নাগরিকদের মতামত প্রকাশ, সাংবাদিকদের ভীতিহীন অনুসন্ধান এবং সুশীল সমাজের ব্যাপক পরিসরে জনমত গঠনের সুযোগ নিশ্চিত করা।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে এ আইন সংস্কারে আইনমন্ত্রীর সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতির কথা এ সময়ে মনে করিয়ে দেন তিনি।