সাক্ষাৎকারে শাহরিয়ার আলম: র্যাবকে কখনো বিরোধীদল দমনে ব্যবহার করা হয়নি
2022.06.03
ওয়াশিংটন ডিসি

বাংলাদেশে বিরোধীদল দমনে কখনো র্যাবকে ব্যবহার করা হয়নি বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
উচ্চ পর্যায়ের অর্থনীতি বিষয়ক আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসে বেনারনিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন।
বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) এবং এর সাত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বর অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, এর পর থেকেই বাংলাদেশে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রায় শূন্যের কোঠায়।
তবে শাহরিয়ার আলমের দাবি, “র্যাবকে কখনোই বিরোধী দল দমনে ব্যবহার করা হয়নি।”
র্যাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি সহায়তা দেবার পাশাপাশি সংস্থাটির কর্মপদ্ধতি (প্রসিডিউর) নির্ধারণেও ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, “পৃথিবীতে যত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে; জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে তার মধ্যে র্যাব অন্যতম।”
বিভিন্ন অভিযানে র্যাবের সাথে গোলাগুলিতে আওয়ামী লীগের ‘বিপথগামী’ অনেকেই নিহত হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, “আমি অন্তত পাইনি যে র্যাবের দ্বারা বিএনপি বা জামাতের কোনো বড়ো পদধারী নেতা বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা হেনস্তা হয়েছেন। নিহত হওয়া বা মেরে ফেলা তো অনেক দূরের কথা।”
র্যাব ও এর কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা যথাযথ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে তাঁর মতে, অস্ত্রধারী কোনো বাহিনীর কোনো সদস্যের ব্যক্তিগতভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা একেবারে “উড়িয়ে দেয়া যায় না।”
র্যাবের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাঁকে আইনের মুখোমুখি হতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, গত তিন বছরে বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় র্যাবের “কয়েকশো কর্মকর্তা এবং সদস্য চাকরীচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি, ডিপার্টমেন্টাল ইনকোয়ারি হয়েছে।”
ইলিয়াস আলী ‘এ মিসিং পারসন’
পৃথিবীর প্রতিটা দেশেই অনেকে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কারণে গা ঢাকা দেন আবার অনেকে অপহরণ বা খুনের শিকার হন মন্তব্য করে র্যাবের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে “এরকম ঘটনা ঘটলেই র্যাব করেছে এটা বলব আমরা আমরা?”
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ৮০ ব্যক্তির যে তালিকা দেয়া হয়েছে তাতে ১৯৯৪ সালে নিখোঁজ পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমারও নাম রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি’র সময় থেকে সে নিখোঁজ। সেটা আমাদের কাছে চাওয়া হচ্ছে তথ্য, তিনি কোথায় আছেন?”
এছাড়া ওই নিখোঁজ তালিকার “প্রায় আট দশজন” ফিরে এসেছেন বলেও জানান তিনি।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুমের সাথে র্যাব সরাসরি জড়িত- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ‘নেত্র নিউজে’ সংবাদটি প্রকাশিত হবার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “যদি সুইডেনের নেত্র নিউজের কথা বলেন, হু’ইজ কমপ্লিটলি পলিটিক্যালি মোটিভেটেড উইথ সাম ভেরি ব্যাড এজেন্ডা। মানে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা সংবাদ মাধ্যম পরিচালনা করছেন।”
এরকম সংবাদের ওপর প্রতিক্রিয়া দেয়া থেকে “বিরত থাকাটাকে শ্রেয় মনে করব,” মন্তব্য করেও তিনি বলেন, “বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা মির্জা আব্বাস পল্টন অফিসে নিজেই একটা বৈঠকে বলেছেন যে, সেই দিন নিহত হবার আগে পার্টি অফিসে ইলিয়াসের সাথে কার বাকবিতণ্ডা হয়েছিল, ঝগড়াঝাঁটি হয়েছিল। সেটা খোঁজ নেন তাহলেই বাকি কী হয়েছে, বের হয়ে যাবে।”
“ইলিয়াস আলীর ক্ষেত্রে আমরা যতটুকু জানি - হি ইজ এ মিসিং পারসন। পুলিশ এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছে। বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবং একটা সময়ে আসতেও পারে যখন সত্যিকার অর্থে জানা যাবে যে মির্জা আব্বাস যেটা ইন্ডিকেট করেছেন সেটা সত্য না অন্য কিছু আছে।”
“আবার এরকম হতেও পারে যে আমরা কখনোই হয়তো জানব না। কারণ পৃথিবীর সব দেশেই এরকম কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, যেটা আর কনক্লুড করা যায় না,” বলেন শাহরিয়ার আলম।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ‘কোনো আশ্বাস’ নেই
র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো আশ্বাস পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার আলম বলেন, “না, এরকম কোনো আশ্বাস আমরা পাইনি।”
রাতারাতি এরকম কোনো সমাধান আশাও করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যেটা বলার চেষ্টা করছি, যে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এটা করা হয়েছে। এটা ডিসপ্রপরশনেট রিঅ্যাকশন হয়েছে। … এবং ভুল তথ্যগুলোর ভিত্তিতে তারা যেন ভবিষ্যতে আর কোনো সিদ্ধান্ত না নেন।”
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে মার্কিন বিভিন্ন দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে র্যাব সম্পর্কিত তথ্যে তাদের কোনো অস্পষ্টতা থাকলে বাংলাদেশের কাছে জানতে চাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে পুরো প্রক্রিয়াটিকে “পেইনফুলি স্লো প্রসেস” আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “আমাদেরকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।”
ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরেও গত পাঁচ মাসে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, রোহিঙ্গা শিবির ও আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে “বাংলাদেশের মানুষকে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিতে থাকার জন্য,” র্যাব “প্রতিনিয়তই কিন্তু খুব ভালো ভূমিকা রেখেছে, রেখে যাচ্ছে,” জানান শাহরিয়ার আলম।
তবে তাঁর মতে নিষেধাজ্ঞা জাতীয় প্রতিক্রিয়ার ফলে র্যাবের মতো একটি কার্যকর বাহিনীর ‘দক্ষতা’ বা তাদের মোরালের উপর একটা আঘাত আসতে পারে।”
“যদিও র্যাব খুব হাই মরাল নিয়ে সঠিক পথে কাজ করে যাচ্ছে,” বলেন শাহরিয়ার আলম।
নোট: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাক্ষাৎকারের অন্যান্য অংশ পরবর্তীতে প্রকাশিত হবে।