টিপ পরায় নারীকে হেনস্তা: অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
2022.04.04
ঢাকা

কপালে টিপ পরা নিয়ে রাজধানীতে এক শিক্ষিকাকে হেনস্তা এবং প্রাণনাশের চেষ্টার ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশের একজন কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বেনারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার ফারুক হোসেন।
তিনি জানান, অভিযোগকারী শিক্ষিকার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ানোর কথা স্বীকার করায় কনস্টেবলকে নাজমুল তারেককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নাজমুল তারেক ডিএমপির প্রোটেকশন বিভাগে কর্মরত ছিলেন জানিয়ে ফারুক হোসেন বলেন, “যেহেতু তার (নাজমুল তারেক) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, এখন তদন্ত হবে। তদন্ত চলাকালীন সে কোনো দায়িত্বে থাকবে না। তাই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”
তবে ভুক্তভোগী নারী এবং অভিযুক্ত কনস্টেবলের কথার মধ্যে “ভিন্নতা পাওয়া গেছে,” বলে সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রোবায়েত জামান।
“একজনের কথা সঙ্গে অন্য জনের অভিযোগের মিল নেই” জানিয়ে তিনি বলেন, সোমবার রাতে দুইজনকে “এক জায়গায় মুখোমুখি বসিয়ে আসল ঘটনার জানার চেষ্টা করা হবে।”
উল্লেখ্য, কপালে টিপ পরে হেঁটে যাওয়ার সময় রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় পুলিশের হেনস্তার শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে শনিবার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন কলেজ শিক্ষক ড. লতা সমাদ্দার। তিনি ঢাকার তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক।
জিডিতে বলা হয়, টিপ পরায় এক পুলিশ সদস্য তাঁকে উত্ত্যক্ত করেন। প্রতিবাদ করলে তাঁকে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টাও করেন সেই ব্যক্তি।
থানায় করা জিডিতে লতা সমাদ্দার অভিযুক্ত পুলিশের নাম জানাতে পারেননি।
অভিযুক্তকে শনাক্ত করার জন্য ওই এলাকায় সেদিন ডিউটিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরি করে মোবাইল ফোন, সিসি ক্যামেরার ভিডিও এবং বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে নাজমুল তারেককে শনাক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কর্মকর্তারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে ইভ টিজিংয়ে দেখা লজ্জাকর
টিপ পরার জন্য হেনস্তার ওই সংবাদ শনিবার প্রকাশের পর এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। ঘটনাটির প্রতিবাদে কপালে টিপ পরা ছবি পোস্ট করতে থাকেন অসংখ্য নারী।
এ ঘটনায় রোববার সংসদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে হেনস্তাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানান সংসদ সদস্য ও অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কোন সংবিধানে, কোন আইনে লেখা আছে যে একজন নারী টিপ পরতে পারবে না? এখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, এমনকি সে বিবাহিত না বিধবা, সেটা বিষয় নয়। একটি মেয়ে টিপ পরেছে। তিনি একজন শিক্ষক।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে ইভ টিজিংয়ের ভূমিকায় দেখা অত্যন্ত লজ্জাকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ওই শিক্ষিকাকে হেনস্তার ঘটনায় সোমবারও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এদিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে টিপ পরা কয়েকটি ছবি পোস্ট করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি লিখেছেন “আমি মানুষ, আমি মুসলমান, আমি বাঙালি, আমি নারী।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশ নিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার নারীরা।
সোমবার প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ ঘটনাকে নারীর প্রতি চরম অসম্মান বলে দাবি করে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)। ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক জানিয়ে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান সংগঠনটির সদস্যরা।
“ধর্ম ব্যবসায়ী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই নারীদের স্বাভাবিক চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নারীর পোশাক নিয়ে জনসমক্ষে আপত্তিকর আচরণের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে সহিংস ও যৌন নিপীড়নও চালাচ্ছে,” বেনারকে বলেন নারী প্রগতি সংঘের উপপরিচালক শাহনাজ সুমি।
বাংলাদেশের সংবিধানে নারী পুরুষের সমঅবস্থানের কথা বলা রয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সংগঠনটির নেত্রী নাসরিন বেগম বলেন, “নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না, স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারবে না, স্বাধীনভাবে কাজকর্ম করতে পারবে না- এটা হতে পারে না, হতে দেওয়া যাবে না।"