ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের অফিস দখল চেষ্টার অভিযোগ
2024.02.13
ঢাকা

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত দুটি প্রতিষ্ঠানে জোরপূর্বক প্রবেশ করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ৩০ ব্যক্তি।
সোমবার বিকেলে ঢাকার মিরপুরে টেলিকম ভবনে ড. ইউনূস কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে যাওয়ার পরই তাঁরা জোর করে প্রবেশ করে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণ অফিস দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালান।
এই ঘটনায় গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মইনুদ্দিন চৌধুরী মঙ্গলবার মিরপুর শাহ আলী থানায় এ একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের অনুলিপি বেনারের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়, সোমবার বিকেলে প্রথমে আনুমানিক ১১ জন এবং পরে আরো আনুমানিক ২৪ জন টেলিকম ভবনের অভ্যর্থনা কক্ষে প্রবেশ করেন।
“ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী দর্শনার্থীদের রিসিপশনের ফ্রন্ট ডেস্কে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে ভিজিট করতে হয়। সে অনুযায়ী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা তাঁদের তথ্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। তাঁদের মধ্য থেকে একজন নিজেকে কর্নেল রাশেদ পরিচয় দিয়ে জানান যে, তারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এসেছেন এবং গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের অফিসে যাবেন,” বলা হয় অভিযোগে।
ওই ব্যক্তিরা সিকিউরিটি অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিস্টেমের ওপর দিয়ে ডিঙিয়ে লিফট লবির সামনে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে গ্রামীণ টেলিকম ও তারপর গ্রামীণ কল্যাণের অফিসে প্রবেশ করেন উল্লেখ করে এতে বলা হয়, “তাঁরা তাঁদের যথাযথ পরিচয়পত্র দেখাননি, এমনকি উক্ত ভবনে প্রবেশের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষের প্রদান করা অফিস অর্ডার না দেখিয়ে জবরদস্তিমূলকভাবে অফিসে প্রবেশ করেন।”
এতে বলা হয়, আগত ব্যক্তিরা ভবনে কর্মরত “কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইডি কার্ড দেখা শুরু করেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরেও অফিস ত্যাগে বাধা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে অনেককে তাঁরা বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখান।”
পরবর্তীতে গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে তারা পৃথকভাবে মিটিং করেন উল্লেখ করে অভিযোগে আরও বলা হয়, “তারা গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের জানান যে, উক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন হয়েছে, নতুন চেয়ারম্যান ও নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
অভিযোগে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে মিটিং শেষে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় তাঁরা তাঁদের দুইজন প্রতিনিধি অফিসে রেখে যান ও উপস্থিত সবাইকে অবগত করেন যে, তাঁদের আরেকজন প্রতিনিধি অফিস অর্ডার নিয়ে পথে আছেন। উক্ত অফিস অর্ডার আসার পর গ্রামীণ টেলিকমের অফিসে তালাবদ্ধ করবেন এবং পর দিন (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় অফিস খুলে তাঁরা পরবর্তী করণীয় গ্রহণ করবেন।
সর্বশেষ রাত আনুমানিক ৯টায় অফিস তালাবদ্ধ করে তাঁরা টেলিকম ভবন ত্যাগ করেন।
এ রকম পরিস্থিতিতে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা “ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন” উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের “নিরাপত্তা সহায়তা”র অনুরোধ জানানো হয় অভিযোগে।
গ্রামীণ কল্যাণের অভিযোগে আগত ব্যক্তিদের কারো নাম পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছেন এবং ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হয়েছে জানিয়ে শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বেনারকে বলেন, “আমরা তদন্ত করে দেখছি, কোনো জোর-জবরদস্তির ঘটনা ঘটেছে কি না।”
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ. কে. এম. সাইফুল মজিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা ইউনূসকে হয়রানির অংশ
সোমবারের মতো মঙ্গলবার রাতেও ওই ব্যক্তিরা তাঁদের দুজন প্রতিনিধি রেখে ভবনে তালা লাগিয়ে যান বলে বেনারকে জানান ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, “প্রফেসর ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। এখন তাঁর প্রতিষ্ঠানও জোরপূর্বক কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে এসব হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “কোম্পানি মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের পর গ্রামীণ ব্যাংক আর কখনো গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়নি।
“কথার কথা হিসেবে যদি এটা মেনেও নেই যে, একজন চেয়ারম্যান ও দুজন পরিচালক নিয়োগ হয়েছে, তাহলে তাঁরা নিজেরা আসবেন। এই বিপুল সংখ্যক লোক নিয়ে এসে ভয়-ভীতি প্রদর্শন থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের চেষ্টা হচ্ছে,” বলেন মামুন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, রাতে নিজেদের গ্রামীণ ব্যাংক মনোনীত প্রতিনিধি দাবি করে প্রফেসর ইউনূসের দুটি প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ব নেওয়ার চেষ্টা দুঃখজনক।
“এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, প্রফেসর ইউনূসকে অব্যাহতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা দেশের জন্য নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে বিশ্ব দরবারে,” বলেন তিনি।
ঘটনা যা-ই ঘটুক তা প্রকাশ্যে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে হওয়া প্রয়োজন দাবি করে তিনি বলেন, “সরকারকে এ বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।”
দেশে-বিদেশে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত ১ জানুয়ারি প্রফেসর ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তিন কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি শ্রম আদালত।
গত সোমবার ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ৫০ কোটি টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে জমা দিয়ে ২০১১ থেকে ২০১৩ করবর্ষের আয়কর দাবির বিরুদ্ধে আপিল করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
ইউনূসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার কর্মকর্তার রিট আবেদন খারিজ করে একটি হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রায় দেয়। রায়ে আদালত বলেছে, এখানে অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।
২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আয়কর দাবি করে গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্টকে ২০২০ সালের নভেম্বরে নোটিশ পাঠায় এনবিআর। তখন ট্রাস্টের তহবিলে ‘অর্থ নেই’ দাবি করে ওই কর মওকুফ চাওয়া হয়। সেই আবেদন এনবিআর প্রত্যাখ্যান করলে ওই নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ইউনূস।