করোনাভাইরাস: চীনের উহান থেকে ফেরত আনা হচ্ছে বাংলাদেশিদের

জেসমিন পাপড়ি
2020.01.31
ঢাকা
200131_BD_Biman_China_1000.jpg করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক চীনা যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী। ৩০ জানুয়ারি ২০২০।
[নিউজরুম ফটো]

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের হুবাই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরে আটকে পড়া অন্তত ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে ফেরত আনতে একটি বিশেষ বিমান পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিমানের এই বিশেষ ফ্লাইটটি উহানের ‍উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান।

“তিনজন চিকিৎসক ও একজন নার্স নিয়ে ফ্লাইটটি উহানে গেছে। চার ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে ফ্লাইটটি সেখানে অপেক্ষারত বাংলাদেশিদের নিয়ে রাতেই ফিরবে,” বলেন তিনি।

শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “চীন থেকে ঢাকা ফেরার পর সবাইকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সেখান থেকে পরিবারকে নিয়মিত সব খবর দেবো আমরা।”

এ সময় স্বজনরাও ফেরত আসাদের সাথে দেখা করতে পারবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “ফেরত আসা বাংলাদেশিদের স্বজনেরা স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের দেখার জন্য ব্যাকুল থাকবেন। কিন্তু তাদের প্রতি অনুরোধ তাঁরা যেন কয়েকটা দিন নিজেদের সামলে রাখেন।”

ফেরত আসাদের মধ্যে কেউই আক্রান্ত নন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “তাঁরা করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান শহর থেকে ফিরছেন, এ কারণে তাদের কেউ আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন এবং তাঁদের মাধ্যমে যাতে অন্যরা সংক্রমিত না হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “কেবল উহানে বসবাসরতদেরকেই আজ দেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। অন্য প্রদেশে বসবাসকারীরা তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে থাকায় এই মুহূর্তে তাঁদের আনার ব্যাপারে ভাবছে না সরকার।”

তিনি জানান, চীন থেকে ফেরত আনা ৩৬১ জনের মধ্যে ১৮টি পরিবার, ৪৭ জন নারী, ১৯টি শিশু, ২টি ৫ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে এই মারাত্মক ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত হয়। ভাইরাসটি কোনো প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে এসেছে কি না, বা কীভাবে ছড়ায় তা এখনো জানা যায়নি। মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটানো এ ভাইরাস আক্রমণের লক্ষণগুলো অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো হয়।

এখনো করোনাভাইরাসের কোনো টিকা তৈরি হয়নি। ফলে এই রোগের কোনো চিকিৎসা জানা নেই। তবে সংক্রমণ এড়াতে যারা ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বা ভাইরাস বহন করছেন এমন কারও সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত এক মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে মারা গেছেন ২১৩ জন আর সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা পৌঁছেছে দশ হাজারে।

চীন ছাড়াও বিশ্বের প্রায় ১৮ দেশে অন্তত একশ মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় এবং বিভিন্ন জায়গায় মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার খবরে করোনাভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবকে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চীনের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উহান শহরের মানুষদের গত দশ দিন ধরে কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন পার করতে হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো বাংলাদেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে চীনের উহানের বিভিন্ন স্থানে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে সেখানকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে চীনে বাংলাদেশ দূতাবাস। সেখানেও তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বেনারকে বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে বাসে করে উহান বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।”

এই শিক্ষার্থী জানান, “সরকার একটি নির্দিষ্ট সময় আমাদেরকে  ‘কোয়ারেন্টাইন’ (বিচ্ছিন্ন) রাখার যে ব্যবস্থা করেছে তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কারণ আমরা চাই না এই ভয়াবহ ভাইরাসটির বিস্তার হোক।”

এদিকে উহান থেকে কিছু দূরে ইয়াচাং নামক স্থান থেকেও ১৫০ জন ছাত্রকে ফেরত আনার বিকল্প ব্যবস্থার করা হচ্ছে বলে নিজের ফেসবুক পোস্টে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি চিফ মাসুদুর রহমান বেনারকে জানান, চীনে সব মিলিয়ে তিন হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের মধ্যে উহানে তিনশজনসহ পুরো হুবাই প্রদেশে রয়েছেন পাঁচশজন। যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।

চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ১৭ জানুয়ারি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়তে গেছেন। একই সময় চীনে ভ্রমণ করেছেন ৩৭ হাজার বাংলাদেশি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।