বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে চীন
2019.08.27
ঢাকা

বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পর এবার নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে চীন।
এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে সৌর ও বায়ুচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মঙ্গলবার ঢাকায় বাংলাদেশের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) এর মধ্যে এক সমোঝতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এতে এনডব্লিউপিজিসিএল এর পক্ষে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এম খোরশেদ আলম ও চীনের সিএমসি কোম্পানির পক্ষে এর চেয়ারম্যান রুয়ান গুয়াং স্মারক স্বাক্ষর করেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মুখপাত্র ও জনসংযোগ পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে চীনাদের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনা বিনিয়োগ এটিই প্রথম।”
সমোঝতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও চীনের দুই কোম্পানি মিলে একটি যৌথ কোম্পানি গঠন করবে বলেও জানান তিনি।
সাইফুল হাসান জানান, বাস্তবায়নে মোট কত টাকা ব্যয় হবে তা প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত হবার পরে ঠিক করা হবে, তবে ওইসব প্রকল্পে বাংলাদেশ ও চীনের অর্থায়ন শতকরা পঞ্চাশ ভাগ করে হবে।
এদিকে বাণিজ্য সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম পিভি ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রকল্পগুলোর জন্য চীনের পক্ষ থেকে আনুমানিক ৫০ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রকল্পগুলোর জন্য জায়গা বরাদ্দ করবে।
নতুন প্রকল্পগুলোর জন্য এই অর্থায়নটি চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগের অংশ। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ এর আওতায় আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ৭০টি দেশকে নিজেদের সাথে রেল ও সড়ক পথে সংযুক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে চীন।
প্রসঙ্গত ২০১৪ সাল থেকে এনডব্লিউপিজিসিএল ও সিএমসি যৌথভাবে পটুয়াখালির পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। গত জুনে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাংলাদেশি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন চীনা নাগারিক নিহত হন।
নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে বায়ু ভিত্তিক একটি বিদুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে পায়রা প্রকল্পের কাছে।
“আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী আমরা আমাদের মোট জ্বালানির শতকরা ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করতে হবে। সে কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে,” বেনারকে বলেন সাইফুল হাসান চৌধুরী।
বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা একভাগেরও কম বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে বলে বেনারকে জানান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ম. তামিম।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সমস্যা হলো, ভূমি সঙ্কট। এই খাতে প্রচুর ভূমি প্রয়োজন।”
চীন ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। সরকারি হিসাব মতে, ২০১৬ সালে যেখানে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬১ মিলিয়ন ডলার সেখানে ২০১৮ সালে তা পৌঁছেছে ১.০৩ বিলিনয় ডলারে।
গত জুলাইতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালেও বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে বেশ কিছু সমঝোতা হয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি বিষয়ক সমঝোতা।