নৌবাহিনীতে যুক্ত হলো চীনের তৈরি তিনটি ও দেশে তৈরি দুইটি জাহাজ
2020.11.05
ঢাকা

জলসীমার সার্বভৌমত্ব ও সমুদ্র সম্পদ সুরক্ষায় নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশের নৌ বহরে যুক্ত হয়েছে চীনের তৈরি তিনটি যুদ্ধ জাহাজ ও দেশে তৈরি দুটি জরিপ জাহাজ।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাহাজগুলো কমিশনিং করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর ফলে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করল নতুন দু’টি আধুনিক ফ্রিগেট বানৌজা ‘ওমর ফারুক’, ‘আবু উবাইদাহ’ ও একটি করভেট যুদ্ধজাহাজ ‘প্রত্যাশা’। একইসঙ্গে জরিপ জাহাজ বানৌজা ‘দর্শক’ ও বানৌজা ‘তল্লাশী’ কার্যক্রম শুরু করেছে।
“এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার ক্রমাগত অগ্রযাত্রায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো। দিনটি শুধু বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের,” কমিশনিং অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নৌবাহিনীতে সর্বশেষ যুক্ত হওয়া তিনটি যুদ্ধজাহাজ চীন থেকে আমদানি করা হলেও জরিপ জাহাজ দুটি খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি।
চীনে তৈরি তিনটি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে ‘ওমর ফারুক’ ও ‘আবু উবাইদাহ’ চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি এবং ‘প্রত্যাশা’ গত বছরের ২৭ এপ্রিল চীন থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছায় বলে জানা যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সেই সময়কার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে।
নতুন তিনটিসহ বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে সর্বমোট যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা এখন ২১টি বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানায় সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস। অন্যদিকে নৌবাহিনীর ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট যুদ্ধজাহাজ ও সহযোগী যানের সংখ্যা ৮০টির বেশি।
এদিকে “সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য আমাদের নৌ বাহিনীর শক্তি ও সক্ষমতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন,” বলে মন্তব্য করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব)।
তিনি বেনারকে বলেন, “আমাদের যে ২০০ কিলোমিটার এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন আছে অর্থাৎ ব্লু ইকোনোমির জন্য নৌ বাহিনীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।”
“পাঁচটি জাহাজ নৌ বহরে যুক্ত হওয়ার খবর ইতিবাচক,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তবে এগুলো খুব বড়ো ধরনের জাহাজ নয়। আমাদের আরো কমপক্ষে দুটো সাবমেরিন দরকার, আরো কিছু বড়ো যুদ্ধ জাহাজ দরকার।”
মিয়ানমারের সাথে যা সম্পর্ক তাতে যেকোনো সময়, যে কোনো কিছু হতে পারে—এমন আশংকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশটি মাঝে মাঝে আমাদের বিভিন্ন দ্বীপকে নিজেদের বলে দাবি করে, এটা ভালো লক্ষণ নয়। কাজেই নেভিকে শক্তিশালী করা দরকার।”
আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম শাম্মী বেনারকে জানান, সদ্য সংযোজিত হওয়া নৌবাহিনীর দুটি ফ্রিগেট ওমর ফারুক ও আবু উবাইদাহ’র প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১১২ মিটার ও প্রস্থ ১২.৪ মিটার এবং করভেট যুদ্ধজাহাজ বানৌজা প্রত্যাশা’র দৈর্ঘ্য ৯০ মিটার ও প্রস্থ ১১.১৪মিটার।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, এসব যুদ্ধজাহাজ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। এগুলো শত্রুর বিমান, জাহাজ এবং স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম। এছাড়া জাহাজগুলোতে হেলিকপ্টার অবতরণ ও উড্ডয়নের সুবিধাও রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গভীর সমুদ্রে দীর্ঘ সময়ব্যাপী মোতায়নযোগ্য এসব জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্র এলাকায় “অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান ও জলদস্যুতা রোধ, সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা, ব্লু-ইকোনমির বিভিন্নকর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি তেল, গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বরাদ্দকৃত ব্লকসমূহের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত আধুনিক জরিপ জাহাজ বানৌজা দর্শক ও তল্লাশীর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৩২.৭৮ মিটার ও প্রস্থ ৮.৪ মিটার যা ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৪ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম বলে জানায় আইএসপিআর।
দেশের উপকূলীয় এলাকায় সকল ধরনের হাইড্রোগ্রাফিক এবং ওশানোগ্রাফিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার সক্ষমতা রয়েছে জাহাজ দুটির।
বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যৌথ মহড়া
একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে চারদিনব্যাপী বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌ বাহিনীর যৌথ মহড়া।
নগরীর বিএন ফ্লিট হেড কোয়ার্টার্সে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ মহড়ার উদ্বোধন করেন কমান্ডার বিএন ফ্লিট রিয়ার এডমিরাল এম মাহবুব-উল ইসলাম।
মহড়ায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাপ্টেন এ্যান ম্যাককান এবং কমডোর, ডেস্ট্রয়ার স্কোয়াড্রন-৭ সিঙ্গাপুর থেকে অংশ নেন।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, এই মহড়ার মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক আরও উন্নত করা। পাশাপাশি দুই দেশের নৌবাহিনীর অপারেশনাল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা অর্জন, নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিতি লাভ করা, যা বিভিন্ন তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।
এ প্রশিক্ষণ ও মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ইউএসএনএস মিলিনোকেট এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ, বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াডস ও নেভাল অ্যাভিয়েশন অংশগ্রহণ করছে বলে জানায় আইএসপিআর।