একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু, রাস্তায় বিএনপি ও বাম দল
2019.01.30
ঢাকা

ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রত্যাখ্যান, প্রতিবাদ ও পুনঃনির্বাচনের দাবির মুখেই বুধবার যাত্রা শুরু করেছে নবগঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ। একই সাথে যাত্রারম্ভ করল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন আওয়ামী লীগ সরকার।
দেশের সংবিধান অনুযায়ী নতুন সরকারের মেয়াদ নবগঠিত সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। সেই হিসাবে ৩০ জানুয়ারি থেকে আগামী পাঁচ বছর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন থাকবে।
প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে সংসদে যোগ দেননি বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আট এমপি। এখনো শপথ না নেয়ায় তাঁরা আদৌ এ সংসদে যোগ দেবেন কিনা এমন প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।
ঐক্যফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত সংসদে যাবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “সংসদে কী হচ্ছে না হচ্ছে খোঁজ-খবর রাখছি। অনেক বিতর্কিত বিষয় আছে। তা পর্যবেক্ষণ করে আমরা লিখিতভাবে বলব।”
এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পাটি চেয়ারম্যান এএইচএম এরশাদ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকায় উদ্বোধনী দিনে যোগ দিতে পারেননি বলে জানান সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।
“সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে তিনি (এরশাদ) সংসদে যোগ দেবেন,” বেনারকে বলেন কাদের।
উদ্বোধনী দিবসে সর্বসম্মতিক্রমে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে টানা তৃতীয়বারের মতো স্পিকার নির্বাচন করেছেন সংসদ-সদস্যরা। এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশিবার এই পদে নির্বাচিত হওয়ার নজির স্থাপন করলেন দেশের এই প্রথম নারী স্পিকার।
দশম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়াও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একই পদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন।
একই দিন প্রধান হুইপ হিসাবে নূর-ই-আলম চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নিয়োগ দিয়েছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। রাষ্ট্রপতি আরো ছয় এমপিকে একাদশ জাতীয় সংসদের হুইপ হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
হুইপ হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন, আতিউর রহমান আতিক, ইকবালুর রহিম, মাহবুব আরা গিনি, পঞ্চানন বিশ্বাস, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও শামসুল হক চৌধুরী।
রাজপথে বিএনপি
নতুন সংসদকে ‘দখলদারির সংসদ’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে ঢাকার রাস্তায় মানববন্ধন করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনসমুহ।
বিকাল তিনটায় অধিবেশন শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে, গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করে আজকে আরেকবার তাঁরা (আওয়ামী লীগ) একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করবার জন্যে এই দখলদারিত্বের সংসদ ও সরকার গঠন করেছে।”
তবে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এবারের নির্বাচনে সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। একটি সফল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
এর আগে নির্বাচনে অনিয়ম ও বিএনপির ফলাফল প্রত্যাখ্যানের ঘটনা উল্লেখ করে ফখরুল পুনরায় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান।
যদিও সব ধরনের অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্ভাবনা নেই।
নতুন নির্বাচন দাবি
একাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোট বলেছে, গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণকে অপমানিত করা হয়েছে। একটি নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এক সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল থেকে বাম গণতান্ত্রিক জোট এ দাবি জানায়।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক জয় পেয়ে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তিন শ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৮টিতে জয় পেয়েছে। তাঁদের নেতৃত্বাধীন মহাজোট পেয়েছে ২৮৯ আসন।
কড়া নিরাপত্তায় সংসদ
কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে বুধবার বিকেলে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতেই স্পিকার নির্বাচনের কাজ শুরু হয়।
স্পিকার হিসাবে ড. শিরীনের নাম প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাঁর প্রস্তাব সমর্থন করেন প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। পরে প্রস্তাবটি ভোটে দিলে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিক্রমে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন।
এরপর ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন ফজলে রাব্বী মিয়া। নির্বাচিত হওয়ার পর স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে শপথ গ্রহণ করেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়।
ঐকমত্য চান রাষ্ট্রপতি
বিরতির পর সংসদ পুনরায় শুরু হলে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য ব্যতীত শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না।”
“গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সকলের ঐকমত্য গড়ে তুলতে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই,” বলেন রাষ্ট্রপতি।
উল্লেখ্য, সংসদের উদ্বোধনী এবং প্রতি বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দানের সাংবিধানিক বাধ্যকতা রয়েছে।
অটুট আছে ‘ঐক্যফ্রন্ট’
সংসদের অধিবেশন শুরুর আগেই সভায় বসেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সভা শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অটুট আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা স্বৈরাচার, যারা জনগণের ক্ষমতাকে সহ্য করতে চায় না, তারা আমাদের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়।”
তিনি বলেন, “আবারও জনগণকে সংগঠিত করে আমাদের লক্ষ্যগুলো সামনে রেখে আন্দোলন গড়ে তুলব। আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে জনগণের ঐক্য।”