নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভার আকার ছোট হবে না: প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিত
2018.10.22
ঢাকা
আপডেট: ২২ অক্টোবর, ইস্টার্ন টাইম বিকেল ৪:৪০
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভার আকার ছোট নাও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভার আকার ছোট হচ্ছে—এমন আলোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এই ইঙ্গিত দিলেন।
এখনকার মন্ত্রিসভায় ‘সব দলের’ প্রতিনিধি থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সোমবার গণভবনে সৌদি আরব সফরের ওপর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। গত ১৬ থেকে ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফর করেন।
এদিকে বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপপ্রধান সহকারী সচিব এলিস ওয়েলস ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সোমবার বলেছেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’ অব্যাহত রাখার ওপরে জোর দিচ্ছেন তাঁরা।
তাঁর এই বক্তব্য সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বেনারকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চায়, আসন্ন নির্বাচনটা যাতে কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয়। কারণ তাদের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল বাস্তবায়নে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা থাকা দরকার।”
উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মন্ত্রিসভা ছোট করা হলে একজনকে কয়েকটা মন্ত্রণালয় চালাতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোনো কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দুই তিন মাসের জন্য থমকে যেতে পারে। এ বিষয়গুলোও ভাবতে হবে।”
২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সে সময় বিরোধী দলে থাকা বিএনপি নির্বাচনে আসতে রাজি হচ্ছিল না বলে তখন তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, “তারা যে মন্ত্রণালয় চায়, সেই মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে বলেছিলাম। তারা যখন আসেনি, তখন বিভিন্ন দল নিয়ে ছোট মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল।”
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত চায় যুক্তরাষ্ট্র
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপপ্রধান সহকারী সচিব এলিস ওয়েলস বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) এমন পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ দিচ্ছি, যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং স্বচ্ছ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনিক কাঠামোগুলো জোরদার করা গেলে তা এ দেশের ভবিষ্যৎ সাফল্যকে এগিয়ে নেবে। বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোয় এ বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার কথা জানান এলিস।
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভুলও শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে।”
সংবাদ সম্মেলনে এলিস মার্কিন সরকারের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। একই সঙ্গে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গত শনিবার বাংলাদেশে আসা এলিস সোমবার সকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়ে যাবে বলে এলিস জানান।
সৌদির সাথে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি হয়নি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অতীতে সৌদি সফরে গিয়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধানেরা শুধু ‘মিসকিনের’ মতো আরও বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের জন্য সৌদি সরকারকে অনুরোধ করত। কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আগে শুধু আমরা মিসকিন হিসেবে যেতাম। এখন বলছি, আপনারা আসেন এবং বিনিয়োগ করেন।”
তিনি বলেন, “এখন আমরা একটা স্বাধীন দেশ, আমরা উন্নত দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা বিনিয়োগ চাই। আমরা সহযোগিতা চাই। দুই দেশের মধ্যে যেন সম্পর্ক হয় সেইভাবে আমরা কথা বলেছি।”
প্রধানমন্ত্রী সৌদি সফরে বাদশা ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে সৌদি আরবের সাথে প্রস্তাবিত সামরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।
সমঝোতা স্মারকের ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের কিছু বর্ডার এলাকায় মাইন আছে। সেই মাইন অপসারণের ক্ষেত্রে তারা আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে যথেষ্ট পারদর্শী।”
তিনি বলেন, “সেই সাথে তাদের ডিফেন্সের কিছু কন্সট্রাকশন দরকার। সেই কন্সট্রাকশনের ক্ষেত্রেও আমরা তাদের সহযোগিতা করতে যাচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন কুয়েতে যেভাবে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করে আসছে সেই আদলে সৌদি আরবেও বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সদস্যরা মাইন অপসারণ, অবকাঠামো নির্মাণ ও ‘অন্যান্য’ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।
তবে তিনি অন্যান্য সহযোগিতাগুলো কী সে ব্যাপারে কিছু বলেননি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক দাউদ আলী বেনারকে বলেন, “সৌদি আরবের সাথে সামরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষর না হওয়ার কারণ হলো সৌদি যুবরাজের ব্যস্ততা।”
তবে ওই সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের যুদ্ধে জড়িত হওয়ার কোনো প্রস্তাব নেই বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “কুয়েতের সাথে আমাদের যে সামরিক সম্পর্ক আছে সেই অনুসারে আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সেখানে মাইন অপসারণ, রাস্তাঘাট ও সামরিক অবকাঠামো নির্মাণ করে থাকে।”
তবে তিনি বলেন, “সৌদি আরবের সাথে সামরিক সম্পর্কের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হতে হবে। কারণ, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সৌদি আরব ও ইরান দুই শিবিরে বিভক্ত।”
“আমাদের সাথে সৌদি আরব ও ইরান দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি আরবের সাথে সামরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আমরা যেন অন্য দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক নষ্ট না করি,” যোগ করেন জেনারেল সাখাওয়াত।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন গ্রেপ্তার
সোমবার রাতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক মোর্চা ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও সরকারের সমালোচক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে ঢাকার উত্তরা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
চলতি সপ্তার শুরুর দিকে একটি টেলিভিশন টকশোতে ব্যারিস্টার মইনুল সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করায় তাঁর বিরুদ্ধে সারা দেশে বেশ কয়েকটি মানহানির মামলা হয় বলে জানায় বাংলাদেশি গণমাধ্যম।
এর মধ্যে রংপুরে দায়ের করা একটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রেক্ষিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ সরকারের সংবাদ সংস্থা বাসস।