‘ভোটের অধিকার’ আন্দোলন শুরুর ঘোষণা ঐক্যফ্রন্টের
2018.10.24
ঢাকা
সিলেটে সমাবেশের মধ্য দিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিলো নব গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জোট গঠনের পর বুধবার প্রথম জনসভায় সুষ্ঠু নির্বাচন আর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ফ্রন্টের নেতারা।
“শত বাধা বিপত্তির মধ্যে আমাদের সমাবেশে প্রত্যাশিত লোক উপস্থিতি ছিল। শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিবেচনায় এ সমাবেশ সফল হয়েছে,” বেনারকে বলেন ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত চৌধুরী।
এ সভা থেকে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে জোটের ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
এদিকে একই দিন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশের অদূরে ‘সরকারের উন্নয়নের প্রচারপত্র বিলি’ নামের একটি পাল্টা কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই সমাবেশকে রাজনীতিতে নতুন অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। এ সমাবেশ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না এলেও বিএনপির অবস্থান মজবুত হয়েছে বলেও মনে করছেন তাঁরা।
রাজনীতি বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বেনারকে বলেন, “আজকের জনসভা থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পুরোনো কথাই এসেছে ঘুরেফিরে।”
“তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে এই প্রথমবারের মতো সভা করে বিএনপির অবস্থান আরও শক্তিশালী হলো। আরও নির্বাচনমুখী হলো দলটি। বিএনপি যে এক্সিট রুট খুঁজছিল ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে তা পেল,” মনে করেন তিনি।
তারেক শামসুর রেহমান বলেন, “এটা এখন নিশ্চিত যে, জোটটি ধীরে ধীরে নির্বাচনী জোটে পরিণত হতে যাচ্ছে। বিএনপিও এই জোটের প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে নির্বাচনে যাবে।”
বহুদিন ধরে বিএনপির সাথে ২০–দলীয় জোটে থাকলেও ঐক্যফ্রন্টে নেই জামায়াতে ইসলামী। তবে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট কেউই জামায়াতের অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
অন্যদিকে, এই পুরো প্রক্রিয়ায় জামায়াত অত্যন্ত কৌশলী বলে মনে করছেন এই রাজনীতি বিশ্লেষক।
অধ্যাপক তারেক বলেন, “আমার মনে হয় হয়, জামায়াতের কাছে অপশন দুটো। এক, তাঁদের জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। সে ক্ষেত্রে জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত নন কিন্তু জামায়াত সমর্থন করবে এমন ৫-১০ জন ব্যক্তি বিএনপির ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেবে। আবার এমন একটি অবস্থাও হতে পারে যেখানে ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপি তাঁদের সমর্থন করবে।”
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
“একটি স্বাধীন দেশের মালিক জনগণ,” উল্লেখ করে সিলেটের জনসভার প্রধান অতিথি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, “দেশের মালিকানা পুনরুদ্ধার করতে হলে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজন।”
“আমাদের দেওয়া সাত দফার বিষয়গুলো এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের দাবিগুলো দেশের প্রতিটি গ্রাম, থানা, ইউনিয়ন ও জেলা উপজেলার জনসাধারণের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে,” বলেনি তিনি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে জোটের ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন জনসভার প্রধান বক্তা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, আমাদের লক্ষ্য মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনা, আমাদের লক্ষ্য একটি কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র নির্মাণ করা।”
মির্জা ফখরুল সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তফসিল ঘোষণার পূর্বে পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, সংসদ বাতিল করুন।”
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি নিয়ে সরকারকে হুঁশিয়ার করেন।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না তফসিল ঘোষণার আগে সরকারকে সংলাপের আহ্বান জানান।
জনসভার পরপরই গ্রেপ্তার
সমাবেশের আগের রাত থেকেই বিরোধীপক্ষের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, সমাবেশস্থলে আসার পথে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। আবার জনসভা শেষ হওয়ার পরপরই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে ঢাকায় ফেরার পথে ওসমানী বিমানন্দরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মুক্তাদিরকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।
“এই জনসভাকে কেন্দ্র করে গত দুই দিন যাবৎ সিলেটে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হয়েছে। শত বাধার পরও শান্তিপূর্ণ জনসভা শেষে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রমাণ করে সরকার দমনপীড়ন করে জোর করে ক্ষমতায় থাকার নীল নকশা করছে,” সাংবাদিকদের বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিলি
এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগও ‘সরকারের উন্নয়নের প্রচারপত্র বিলি’ নামের পাল্টা কর্মসূচি দেয়। এ কর্মসূচির আওতায় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশস্থলের অদূরে জনসভা করে। তবে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে শুরু হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা আগেই ক্ষমতাসীনদের কর্মসূচি শেষ হয়।
মাত্র ২০০ গজ অদূরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করায় দুই পক্ষসহ নগরবাসীর মধ্যেও উৎকণ্ঠা ছিল। এদিন সকাল থেকে পুরো এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
যদিও আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি পাল্টা কর্মসূচি নয়, দলের ধারাবাহিক কর্মসূচিই পালন করছেন তাঁরা। প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে শহরের কোর্ট পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টা পর্যন্ত প্রচারপত্র বিলি করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত হয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান তাঁদের কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, “আওয়ামী লীগ সংঘাতের রাজনীতি নয়, উন্নয়নের রাজনীতি করে। এটা আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি ছিল।”
“তবে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশেও আমাদের নজর থাকবে। তারা কোনো ধরনের উসকানিমূলক তথ্য ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি,” বলেন তিনি।