সরকারি দল ভোট চাইছে, বিরোধীরা চাইছে সুষ্ঠু নির্বাচন
2018.10.26
ঢাকা

জাতীয় নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধ ও বিতর্ক জোরদার হচ্ছে। সরকারি দল ভোট চেয়ে সভা–সমাবেশ করছে, আর এখন পর্যন্ত বিরোধী জোটের চাওয়া নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ।
এদিকে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সংলাপের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বিরোধীরা চাইলেও সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
“দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদৌ সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ–সংশয় তো আছেই। এ জন্য বিরোধী দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি বড় করে সামনে আনছে,” বেনারকে বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্ররা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার পর রাজনীতির পালে নতুন হাওয়া বইছে। ঐক্যফ্রন্ট সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করলেও সরকার তা প্রত্যাখান করেছে।
সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে; সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা এবং নির্বাচনের আগে সেনা মোতায়েন করা। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি চায় ঐক্যফ্রন্ট।
শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাফ জানিয়ে দিলেন, সাত দফার একটিও মেনে নেওয়া হবে না। আর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই সাত দফা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এর জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ বলেছেন, “যদি আমাদের সাত দফা দাবি না মেনে তফসিল ঘোষণা করেন, তাহলে বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠবে। সেই ঝড়েই ইনশাল্লাহ আমরা আবার একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হব।”
“বিরোধীদলের দাবি বিবেচনায় না নিয়ে একতরফা নির্বাচন করতে চাইলে জনগণ তা প্রতিহত করবে,” বেনারকে বলেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
এদিকে ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বেনারকে বলেছেন “বিরোধী দল নির্বাচন বানচালের চেষ্টা ও নৈরাজ্য তৈরি করতে চাইলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।”
নির্বাচন হতে পারে ১৮ কিংবা ২০ ডিসেম্বর
নভেম্বরের ৪ তারিখ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। নির্বাচন হতে পারে ডিসেম্বরের ১৮ কিংবা ২০ তারিখ। এই লক্ষ্য সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেছেন, “পয়লা নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পর ৪ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।”
সিইসির ভাষণ প্রচারের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আগামী ৩১ অক্টোবর বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন।
চলতি (দশম) সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারী।
আইন সংশোধন
রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণ-প্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন করা হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন।
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান ওই সংশোধনীতে থাকছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। বিরোধীদলগুলো আসন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করলেও আইন সংশোধনসহ এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত ও ব্যবহারিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চায় কমিশন।
“ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা তা এখনো চুড়ান্ত নয়। তবে সকল উপজেলায় এবং সিটি কর্পোরেশনে অন্তত একটি করে আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলেও আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে,” বলেন হেলাল উদ্দিন।
ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে সর্বসাধারণকে অবহিত করার জন্য আগামী ২৭ ও ২৮ অক্টোবর দেশের ৮টি বিভাগে ইভিএম মেলা আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন।
সাতদফা দাবিতে মাঠে ঐক্যফ্রন্ট
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করছে নবগঠিত বিরোধীদলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
দাবিগুলোর সমর্থনে ঢাকা ও সিলেটে সমাবেশ করেছে ঐক্যফ্রন্ট। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে তারা সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।
তবে অনুমতি দেওয়া নিয়ে স্থানীয় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ নেতারা। গত কয়েকদিন আলাপ–আলোচনার পর শেষ মুহূর্তে চট্টগ্রামে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। শনিবার সেখানে সমাবেশ, কয়েকদনি ঘুরিয়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে শুক্রবার, তাও ঐক্যফ্রন্টের পছন্দের স্থান লালাদীঘি ময়দান দেওয়া হয়নি। এরপর ঐক্যফ্রন্ট সমাবেশ করতে চায় রাজশাহীতে।
জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন একাধিকবার বলেছেন, তাঁদের এই জোট নির্বাচনী জোট নয়। বরং গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য তাঁরা জোট করেছেন।
“আমি সরকারের কোনো পদ পাওয়ার জন্য জোট করিনি। গণতন্ত্র পুনোরুদ্ধারের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনগণকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার জন্য জোট করেছি,” সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন ড. কামাল।
আর গত বৃহস্পতিবার ড. কামাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট যে সাত দফা দাবি দিয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০০৬–০৭ সালে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে একই দাবি করেছিল।
নবগঠিত ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী রূপরেখা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রার্থী মনোনয়ন ও শরিকদের মধ্যে আসনবন্টন নিয়েও আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বেনারকে বলেছেন, “সারাদেশে নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি আছে। কিন্তু আগে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তাটুকু চাইছি।”