ঐক্যফ্রন্টের সাথে ‘খোলা মনে’ আলোচনায় বসবে সরকার
2018.10.30
ঢাকা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে অবশেষে সংলাপে বসতে রাজি হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সকালে ড. কামালের বাসায় গিয়ে তাঁর হাতে আমন্ত্রণের চিঠি পৌঁছে দেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান গোলাপ। যাতে ‘সংবিধানসম্মত’ সকল বিষয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
চিঠি হস্তান্তরের পর আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উনাদেরকে আমন্ত্রণ করেছেন।”
এর আগে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বারবার সংলাপের দাবি জানিয়ে আসলেও বরাবরই সে সম্ভাবনা নাকচ করেছে আওয়ামী লীগ।
তবে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দেন ড. কামাল হোসেন। চিঠির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য সংযুক্ত করা হয়।
‘আলোচনা হবে খোলা মনে’
এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকারি দলের সংলাপে খোলামেলা আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে এই সংলাপে সম্মত হয়েছি। আমরা কালক্ষেপণ করিনি। এই আলোচনা হবে খোলা মনে।”
কোনো চাপের কারণে এই সংলাপে বসা হচ্ছে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ঐক্যফ্রন্ট চিঠির সঙ্গে তাঁদের সাত দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্যের কপি সংযুক্ত করে দিয়েছেন। বৈঠকে এসব নিয়েই আলোচনা হবে।”
“তবে সাত দফার মধ্যে কয়েকটি দফা আছে যা সংবিধান সম্পর্কিত। দু’একটি আছে আইন আদালতের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর দুয়েকটি আছে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কিত,” জানান তিনি।
রাজনৈতিক দূরত্ব কমার ইঙ্গিত
সংলাপে সম্মত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টিকে রাজনীতিতে আরো এক ধাপ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। দু’পক্ষই কিছুটা ছাড় দিয়ে আলোচনা করলে সুষ্ঠু সমাধান আসতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ মনে করেন, বর্তমান এই উদ্যোগ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের মধ্যে দূরত্ব কমার ইঙ্গিত বহন করে। ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যকে আলোচনার ভিত্তি ধরে সমাধানের পথ খোঁজা হলে সংলাপ সফল হবে।
তিনি বেনারকে বলেন, “বৈঠকে বিএনপির নেতারা থাকবেন এবং তাঁদেরও যে বক্তব্য আছে, সেগুলি শুনবেন সেটা জেনেই প্রধানমন্ত্রী তাঁদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।”
এটাই এই বৈঠকের ইতিবাচক দিক জানিয়ে আবুল মকসুদ বলেন, “এই সংলাপ সফল হলে মাঠে ঘাঠে যে উত্তেজনাকর বক্তব্য দুপক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছিল, তা কিছুদিনের জন্য বন্ধ হতে পারে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “ঐক্যফ্রন্ট যা বলবে তা আওয়ামী লীগ মেনে নেবে সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু কিছু বিষয় মেনে নিয়ে যদি একটা ভালো নির্বাচনের দিকে যায় তাহলে সেটা সবার জন্য ভালো হবে।”
‘কোনো সংলাপ ব্যর্থ হয় না’
প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সংলাপে অংশ নিতে ঐক্যফ্রন্টের ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গণভবনে যাবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
ড. কামালের নেতৃত্বে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের সব দলের প্রতিনিধি থাকবেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, শুধু ৭ দফা নয়, এর পাশাপাশি দেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন সব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হবে।
আজ বিকেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে এই জোটের মুখপাত্র আ স ম আব্দুর রব সাংবাদিকদের জানান, “‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে, সব দল যেন অংশগ্রহণ করতে পারে, ভোটাররা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে এসব বিষয়ে নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করব।”
একইসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি নিয়েও আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
তাঁর মতে, “কোনো সংলাপ ব্যর্থ হয় না। একটি সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়।”