নির্বাচনী রাজনীতি: চলছে সংলাপ ও আন্দোলন
2018.11.05
ঢাকা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলমান সংলাপ ও মাঠের আন্দোলনের মধ্যেই আসছে নির্বাচনের তফসিল।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ করতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের সাথে শেষ দফা সংলাপে বসছে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন সরকার-বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্ট। ৭ নভেম্বর এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে বলে সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দ্বিতীয় দফা এই সংলাপের আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা ডেকেছে ঐক্যফ্রন্ট। সংলাপে সাত দফা মেনে না নিলে ঐক্যফ্রন্ট ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে পারে বলে বেনারকে জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শরিক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান।
এদিকে আগামী ৮ নভেম্বর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে ৮ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা তফসিল ঘোষণা করবেন বলে রোববার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
এদিকে সরকারি দলের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপ শেষ হওয়ার আগে তফসিল ঘোষণা না করতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সংবিধান অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একটি নতুন সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।
তবে সংলাপে আশানুরূপ ফলাফল না এলে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
‘সংবিধানের বাইরে যাবার সুযোগ নেই’
ঐক্যফ্রন্টের সাথে বুধবার দ্বিতীয় দফা সংলাপের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি। ছোট পরিসরে আলোচনা হবে। আমরা ১০ জন থাকব, তারা সেরকম পাঠাবে।”
ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির ব্যাপারে সরকারের মনোভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, “ঐক্যফ্রন্টের দাবি তো কয়েকটি মেনে নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু বিষয় আছে শিডিউলের পর আমাদের এখতিয়ারে থাকবে না, যেমন বিদেশি পর্যবেক্ষক বিষয়ে… এসব বিষয় ইলেকশন কমিশন করবে।”
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সরকারের পদত্যাগ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের দাবি সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, “৮ তারিখে শিডিউল হচ্ছে, এ সময় সংবিধানের বাইরে যাওয়ার বা দাবি মেনে নেওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করি না।”
তিনি বলেন, “ঐক্যফ্রন্ট থেকে দাবি করা হচ্ছে সংসদ ভেঙে দিতে হবে বা নিষ্ক্রিয় করতে হবে। আমরা বলেছি সংসদ নিষ্ক্রিয় থাকবে। আলোচনায় আসুক তারা, যদি সংবিধানের ভেতরে থেকে আর কোনো পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তিসংগত প্রস্তাব করেন, গ্রহণ করার মতো হলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।”
তিনি যোগ করেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হচ্ছে আরেকটি বিষয়, সরকারি দল তা মেনে চলবে। মন্ত্রীরা তাঁদের এলাকায় সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা নেবেন না, পতাকা ব্যবহার করবেন না, নিরাপত্তার বিষয়টিও ইলেকশন কমিশনের হাতে থাকবে।”
‘সামনে কঠিন দিন’
খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের অনুপস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগ বিরোধী ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয় প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
আগামী নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ করতে সরকারের করণীয় সাত দফা দাবি জানিয়ে সরকারের কাছে চিঠি পাঠায় গণ-ফোরামের সভাপতি ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে আওয়ামী লীগ সংলাপে রাজি হয়। এর অংশ হিসাবে গত পয়লা নভেম্বর ঐক্যফ্রন্টের সাথে প্রথম দফা আলোচনা হয় সরকারের।
এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে চলমান সংলাপের সারাংশ শেখ হাসিনা নিজে জনগণের সামনে তুলে ধরবেন বলে সোমবার সাংবাদিকদের জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আট বা নয় নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান তিনি।
ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি ও ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার।
এ ছাড়া রয়েছে, ‘গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বেনারকে বলেন, “সাত দফা আদায় করতে আমরা ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সিলেট ও চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছি। সেখানে মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।”
তিনি বলেন, “৭ তারিখের সংলাপের আগের দিন ঢাকায় সমাবেশ করে সাত দফা বাস্তবায়নের ওপর জনমত গঠনের জন্য জনগণের কাছে যাব।”
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, সাত দফার মধ্যে বিএনপির মূল দাবি হলো হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন।
তিনি বলেন, তবে হাসিনা পদত্যাগ করবেন না সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
তাঁর মতে, “যদি সংলাপ ব্যর্থ হয় তাহলে সহিংসতা হবে। আবার সরকারও খুব শক্ত অবস্থানে। সুতরাং, সামনের দিনগুলো কঠিন মনে হচ্ছে।”
ঐক্যফ্রন্টে কাদের সিদ্দিকী
এদিকে সোমবার দুপুরে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন কাদের সিদ্দিকী। তবে শেখ হাসিনার সাথে মত বিরোধের কারণে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেন।
ঐক্যফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বেনারকে বলেন, কাদের সিদ্দিকীর ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই আরও সুদৃঢ় হলো।