সংসদ নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর

শরীফ খিয়াম
2018.11.08
ঢাকা
181108-BD-vote-620.jpg বাংলাদেশ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। ৮ নভেম্বর ২০১৮।
[নিউজরুম ফটো]

আগামী ২৩ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে এই তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।

এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন জোটকে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিকে সাথে নিয়ে গড়ে ওঠা বিরোধী দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন পেছানোর দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “সরকারের ইচ্ছায় একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থী।”

অন্যদিকে ইসির পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে ধোঁয়াশা কেটে গেছে।”

ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ১৯ নভেম্বর অবধি মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে ২২ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর।

সিইসি’র দাবি, “আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।” তাছাড়া কমিশন মনে করে, দেশব্যাপী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর সাথে ক্ষমতাসীনদের পয়লা নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ধারাবাহিক সংলাপ শেষ হওয়ার একদিন পরই ঘোষিত হলো এই সময়সূচি। তবে সংলাপের শেষ দিনে বুধবারও আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চে নির্বাচন চেয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।

এর আগে গত সোমবার ইসির সঙ্গে বৈঠক করেও তফসিল পেছানোর দাবি জানায় তারা।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “ইসি চাইলে তফসিল পিছিয়ে দিতে পারত। তাদের হাতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য যথেষ্ট সময় ছিল।”

“জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সাধারণত ৪৫ দিনের প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। তবে ৩০ দিনের প্রস্তুতিতেও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব,” যোগ করেন দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণাকারী এই সাবেক কমিশনার।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শান্তনু মজুমদার বেনারকে বলেন, “বিএনপির মতো যেসব দলের ভোট আছে, নির্বাচন পেছানোর মধ্যে তাদের সার্থকতা নেই। এতে লাভবান হবে তারা, যাদের পরিচিতি আছে, কিন্তু ভোট নেই।”

“ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি ছাড়া অন্য যেসব দল আছে, সেই সব দলের নেতারা সুপরিচিত হলেও তাদের ভোট নেই,” বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষক।

সব দলকেই ভোটে চায় ইসি

জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকলে রাজনৈতিকভাবে মীমাংসার পাশাপাশি প্রত্যেক দলকে একে অপরের প্রতি সহনশীল, সম্মানজনক এবং রাজনীতিসুলভ আচরণ করার অনুরোধ জানান সিইসি।

মাত্র ১৪ মিনিটের বক্তব্যে তিনি সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশের গণতন্ত্রের ধারা এবং উন্নয়নের গতিকে সচল রাখার আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দীন আহমদের ধারণা, ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও ঐক্যফ্রন্ট ২৩ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেবে।

“কারণ বিএনপিকে সংসদে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তারা সরকার গঠন করতে না পারলেও ‘শক্তিশালী’ বিরোধী দল হিসেবে আগামী সংসদে থাকার চেষ্টা করবে,” বেনারকে বলেন তিনি।

তাঁর দাবি, “২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো যখন নির্বাচন বর্জন করেছিল, তখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল।”

আর ড. শান্তনু মনে করেন, “গত ১০ বছরে বিভিন্ন কারণে ক্ষমতাসীনদের ব্যাপারে জনসাধারণের যে বিরক্তি বা ক্রোধ আছে, সেটাকে পুঁজি করতে ভোটে অংশ নিতে পারে বিএনপি।”

“বর্তমানে বিএনপিতে কট্টরপন্থীরা শক্তিশালী অবস্থায় নেই,” বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের আশ্বাস

সিইসি বলেন, “নির্বাচনী প্রচারণায় সকল প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে।” সকলের জন্য অভিন্ন আচরণ ও সমান সুযোগ সৃষ্টির আশ্বাস দিয়ে তিনি দাবি করেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে।

এ লক্ষ্যে শিগগিরই প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করি।”

“ভোটার, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, প্রার্থী, প্রার্থীর সমর্থক এবং এজেন্ট যেন বিনা কারণে হয়রানির শিকার না হন এবং মামলা-মোকদ্দমার সম্মুখীন না হন তার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কঠোর নির্দেশ থাকবে,” বলেন তিনি।

প্রতিযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন প্রতিহিংসা বা সহিংসতায় পরিণত না হয় সে বিষয়ে ‘বিশেষভাবে অনুরোধ’ জানিয়ে সিইসি বলেন, “আমি প্রত্যাশা করব, অনুরোধ করব এবং দাবি করব, প্রার্থী এবং তাঁর সমর্থক নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মেনে চলবেন।”

তাঁর আশা, প্রত্যেক ভোটার অবাধে এবং স্বাধীন বিবেকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করবেন।

প্রসঙ্গ: সেনা মোতায়েন

সিইসি জানান, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এছাড়া পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছয় লক্ষাধিক সদস্য মোতায়েন করা হবে।

সিইসি আরো জানান, প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে।

প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রের বাছাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন সামগ্রী ক্রয় এবং মুদ্রণের কাজও প্রায় শেষ। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে পারস্পারিক পরামর্শ আদান-প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় সাত লক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

“ইতিমধ্যে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে,” বলেন সিইসি।

ইভিএম শুধু শহরে

ইভিএম ব্যবহার নিয়েও আপত্তি ছিল ঐক্যফ্রন্টের। তবে ইসির বিশ্বাস, ইভিএম ব্যবহার করা গেলে নির্বাচনের গুণগত মান উন্নত হবে এবং সময়, অর্থ ও শ্রমের সাশ্রয় হবে।

“সে কারণে শহরগুলোর সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা থেকে দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় বেছে নেয়া অল্প কয়েকটিতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হবে,” বলেন সিইসি।

তিনি জানান, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধানও রাখা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বহুসংখ্যক সংগঠন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এ ছাড়া এবার প্রথমবারের মতো পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। কর্মকর্তাদের সক্ষমতা অর্জন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও চলমান রয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ৮ নভেম্বর ২০১৮।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ৮ নভেম্বর ২০১৮।
[বেনারনিউজ]
ফের কারাগারে খালেদা

এদিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। হাসপাতাল থেকে সকালে তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

সেখান থেকে তাঁকে নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানিতে হাজির করতে আদালতে নেওয়া হয়। আদালতের কার্যক্রম শেষে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, “আমরা মনে করি, এটা বিচার বিভাগের ওপর অবজ্ঞা করা হয়েছে।”

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল আদালতের নির্দেশে।”

প্রতিবেদনে ঢাকা থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কামরান রেজা চৌধুরী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।