সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যেতে চায় ঐক্যফ্রন্ট
2018.11.09
ঢাকা
প্রধান বিরোধীদল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সর্ববৃহৎ দল বিএনপি ২৩ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার জরুরি সভায় বসছে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী স্থায়ী কমিটি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর রাতেই ২০-দলীয় জোটের নেতাদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শনিবার সভা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয় বলে বেনারকে জানান বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের বেশিরভাগ নেতা শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে বলে বেনারকে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মাহবুবুর রহমান।
একই মতামত জানান দলের নীতি নির্ধারণী সদস্য প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যমত নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না।
শুক্রবার ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বেনারকে বলেন, “শনিবার আমরা স্থায়ী কমিটির সভা করব, ২০-দলীয় জোট নেতাদের সাথে বৈঠক করব এবং ঐক্যফ্রন্টের সাথে আলোচনায় বসব। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে আমরা ভোটে যাব কি না।”
দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বেনারকে বলেন, “শনিবার স্থায়ী কমিটির সভায় আমরা ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনে যাব কি না সেব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে আমি মনে করি আমাদের নির্বাচনে যাওয়া উচিৎ।”
তিনি বলেন, “দল ও জোটের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে, যদিও নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারেও যুক্তি রয়েছে।”
নির্বাচনে না যাওয়ার যুক্তি নিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা নির্বাচনে গেলে হয়তো হেরে যাব। কারণ প্রশাসন, পুলিশ সব আওয়ামী লীগের পক্ষে। শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে হেরে যাওয়ার কোনো মানে নেই।”
তিনি বলেন, “আবার নির্বাচনে যাওয়ার যুক্তি হলো: নির্বাচনে না গেলে দলের ঐক্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না। অনেকে নির্বাচনে অংশ নেবে। দলের এই অবস্থায় সরকার বিরোধী আন্দোলন করা সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনে হেরে সংসদে বিরোধীদল হিসাবে কাজ করলেও আমাদের রাজনৈতিক লাভ হবে।”
ঐক্যফ্রন্টের আরেক দল নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না শুক্রবার বেনারকে বলেন, “আমি মনে করি আমাদের নির্বাচনে যাওয়া উচিত। আমরা নির্বাচনে যাব, কিন্ত প্রশ্ন হলো কীভাবে যাব। তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করে আমাদের অসুবিধায় ফেলে দেয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা একটি বড় জোট। আমাদের কোন দল কত আসন পাবে, আবার কোন আসন পাবে সেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। হাতে আছে মাত্র নয়দিন।”
মান্না বলেন, “জনগণ ঐক্যফ্রন্টকে ভোট দেবে। কিন্তু এই সরকার এক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচিত হতে দেবে না, আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকতে পারছে না।”
বিএনপির তাত্ত্বিক নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ বেনারকে বলেন, “আমি মনে করি বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সাত দফার মূল দাবিগুলো গ্রহণ করা হয়নি।”
“ঐক্যফ্রন্ট ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। আমরা ১৫১টি আসন পেতেও পারি,” বলেন তিনি।
এমাজউদ্দিনের মতে, “যদি আমরা সরকার গঠন করতে না পারি সেক্ষেত্রে সংসদে শক্তিশালী বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করতে পারব। এ মুহূর্তে সেটিই হবে বিএনপির রাজনৈতিক লাভ।”
তবে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষেও রয়েছেন কিছু নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) প্রধান আন্দালিভ রহমান পার্থ তাঁদের একজন।
তিনি শুক্রবার বেনারকে বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে ২০-জোটের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা শনিবার আবার আলোচনা করব।”
পার্থ বলেন, “তবে, আমার দলের মতামত হলো, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই। ভোটে জয়ী হওয়া অথবা হেরে যাওয়া পরের কথা। আগে তো জনগণকে ভোট দিতে হবে। এই সরকারের অধীনে জনগণের ভোটের অধিকার নেই।”
তিনি বলেন, “সবাই জানে এই সরকার জনগণকে ভোট দিতে দেবে না। নির্বাচনে গিয়ে তাদের বৈধতা দেয়ার কোনো মানে নেই।”
রাজশাহী গেলেন না ড. কামাল
এদিকে সাতদফা দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে রাজশাহীতে আয়োজিত ঐক্যফ্রন্টের শুক্রবারের সমাবেশে অংশ নেননি ফ্রন্টের প্রধান ও গণ ফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
ড. কামালের কন্যা সারা হোসেন শুক্রবার বেনারকে বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত থেকে উনার জ্বর। তাই উনি রাজশাহী যেতে পারেননি।”
তবে ড. কামাল না গেলেও গিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এলডিপি প্রেসিডেন্ট কর্নেল অলি আহমদ, মাহমুদুর রহমান মান্না ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অলি আহমদ বেনারকে বলেন. সরকার রাজশাহীর সমাবেশ ব্যর্থ করতে সকল গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও জনগণ অংশগ্রহণ করে সমাবেশকে সফল করেছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার থেকেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা শুরু করেছে।
দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার পক্ষে তিনটি মনোনয়ন ফরম কেনেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে মনোনয়ন ফরম কেনেন সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ।
ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, দেশের মানুষ এখন নির্বাচনমুখী। তারা এমুহূর্তে নির্বাচন বিরোধী কোনো রাস্তার কর্মসূচি পালনে সাড়া দেবে না।
তিনি বলেন, তাই বিরোধীদলের উচিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সাংবিধানিক ধারার রাজনীতিতে মনযোগ দেয়া।