নির্বাচন আরো পেছানোর দাবি নাকচ করল নির্বাচন কমিশন
2018.11.13
ঢাকা

নির্বাচন এক মাস পেছানোর দাবিতে অনড় থাকার কথা জানিয়েছে বিএনপি। একই দাবি নিয়ে বুধবার আবারও ইসিতে যাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যদিও ঐক্যফ্রন্টের দাবির প্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন। এরপর ইংরেজি নববর্ষ। বিদেশি পর্যবেক্ষক ও কূটনীতিবিদরা অনেকেই এ সময় ছুটিতে থাকেন।”
“তাঁদের দৃষ্টির অন্তরালে একটা বড় ভোট চুরির নির্বাচন করতে সরকারের কৌশলী নির্দেশে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন নির্ধারণ করছে ইসি,” বলেন তিনি।
তবে এই দাবি নাকচ করে দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের তারিখ ৩০ ডিসেম্বরের পরে নেওয়ার সুযোগ নেই। মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য কি নির্বাচন বসে থাকবে?”
এদিকে আইনগত সুযোগ থাকার পরেও নির্বাচন না পেছানোকে নির্বাচন কমিশনের পেশাদারিত্বে ঘাটতি হেসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
এ প্রসঙ্গে রাজনীতি বিশ্লেষক ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বেনারকে বলেন, “ইসি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্থা হয়েও স্পষ্টতই নেতৃত্বের গুণমান, কৌশলগত চিন্তাভাবনা এবং পেশাদার শ্রেষ্ঠত্বের ঘাটতিতে ভুগছে।”
“ধারাবাহিকভাবে বিতর্কিত পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের প্রতি জনসাধারণের যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়, যখন অযৌক্তিকভাবে তাড়াহুড়া করে প্রথমবারে ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের ঘোষণা দেয়,” বলেন তিনি।
“এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী কয়েক দিনের সংলাপে আসা সুবাতাসের জানালাটি কার্যত বন্ধ হয়ে গেল, সেটি তারা (ইসি) বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে,” বললেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রমাণের একটি সুযোগও এসেছিল। কিন্তু মধ্য জানুয়ারিতে নির্বাচনের কোনো আইনগত বাধা না থাকলেও মাত্র এক সপ্তাহ নির্বাচন পিছিয়ে কমিশন সে সুযোগও হারাল।”
সরব বিএনপি কার্যালয়
বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কার্যালয়ে ছিল নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়। হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভীড়ে প্রায় দশ বছর পর পল্টন এক মহাসমাবেশের কেন্দ্রে পরিণত হয়। মনোনয়ন ফর্ম নিতে আসা নেতাদের শোডাউনে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পল্টন ও তার আশপাশের এলাকা, যার প্রভাব পড়ে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে।
এদিকে, সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হয়েছে সোমবার। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বেনারকে জানান, মোট চার হাজার ২৩জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। প্রতিটি ফরমের মূল্য ৩০ হাজার টাকা করে এ থেকে দলটি আয় করেছ ১২ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
তবে প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ কাদের মনোনয়ন দিচ্ছে সেটি ১৫ নভেম্বর জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইসিতে যাবে ঐক্যফ্রন্ট
কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আরও পেছানোর দাবি নিয়ে বুধবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মঙ্গলবার জোটের বৈঠকের পর এ তথ্য সাংবাদিকদের জানান ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আমরা যে দাবি করেছি নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার জন্য, এটা অত্যন্ত জরুরি। আমরা আগামীকাল দুপুর ১২টায় আমাদের এই দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাব। সেখানে ড. কামাল হোসেন সাহেবসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ থাকবেন।”
“আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন আমাদের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।”
নির্বাচন পেছানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব বেনারকে বলেন, “আপনারা জানেন, ভোটের যে তারিখ নির্ধারিত হয়েছে এ সময়টায় বড়দিনের ছুটি থাকে। যেটা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উৎসবের সময়। এর পরপরই ইংরেজি নববর্ষ”
“পাশাপাশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আমরা যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি প্রত্যাশা করছি, এই ছুটিতে ভোট হলে, সেই সুযোগও থাকছে না। ফলে সুষ্ঠু ভোটের সুযোগ কমে আসবে,” তিনি বলেন।
এর আগে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ইসির পুনঃতফসিলে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রাখায় আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা মনে করছি, কমিশন একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নয়।”
প্রসঙ্গত, গত ৮ নভেম্বর প্রথম দফার তফসিলে ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচন এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট। পরে ইসি এক সপ্তাহ পিছিয়ে নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর ঠিক করে পুনঃতফসিল দিলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় জাতীয় ঐক্যজোট ও তাদের শরিকরা।
পেছানোর সুযোগ নেই: সিইসি
নির্বাচন আর না পেছানোর যুক্তি দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, ২৮ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদপূর্তি হবে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হলে নতুন সরকার গঠনের জন্য হাতে ২৯ দিন সময় থাকছে।
তাঁর মতে, ৩০০ আসনের নির্বাচনের যে ফলাফলগুলো আসবে সেগুলোর গেজেট করাসহ যাবতীয় কাজের জন্য এই ২৯ দিন বেশি সময় নয়।
এছাড়া ১১ জানুয়ারিতে শুরু হতে যাওয়া বিশ্ব ইজতেমার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লম্বা সময় ব্যস্ত থাকতে হয়, তাই সে সময় নির্বাচন করা কঠিন বলে যুক্তি দেন সিইসি।
২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের যাত্রা শুরু হয়। আগামী ২৮ জানুয়ারি ওই সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে তার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মাহির বৈঠক
এদিকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরী মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে এক বৈঠক করেছেন।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে আসছি, এটা নিশ্চিত। জোটগত নির্বাচন অসম্ভব নয়, এটুকু বলব। আমরা ১৪ দলে আসছি না, আমরা মহাজোটের বিষয়ে আলোচনা করেছি।”