নিম্নমান সন্দেহে ২ কোটি শিশুকে ভিটামিন-এ খাওয়ানো স্থগিত

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.01.18
ঢাকা
190118_Vitamin_A_1000.jpg ঢাকার একটি ক্লিনিকে এক শিশুকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে। ৫ আগস্ট ২০১৭।
[বেনারনিউজ]

দেশের স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম সফল ভিটামিন-এ কর্মসূচিতে নিম্নমানের ক্যাপসুল পাওয়ার অভিযোগ এসেছে। আর সে কারণেই দেশের ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে শনিবার ভিটামিন-এ খাওয়ানো কর্মসূচি স্থগিত করেছে সরকার।

বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা ভিটামিন ক্যাপসুলগুলো নিম্নমানের কি না এবং সেগুলো কীভাবে সরবরাহ করা হলো, তা বের করতে সরকার দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে শুক্রবার বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তবে তিনি জানান খুব তাড়াতাড়ি ভিটামিন-এ কর্মসূচি আবার শুরু হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের সব শিশুকে ভিটামিন-এ খাওয়ানোর কর্মসূচি শনিবার শুরু করার কথা ছিল। সেটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। খুব শি​গগির ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো কর্মসূচির নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।”

হঠাৎ বন্ধ করার কারণ হিসাবে মন্ত্রী বলেন, “আমরা খাওয়ানোর জন্য সারাদেশে ক্যাপসুলগুলো পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিবেদন এসেছে যে, অনেক জায়গাই ক্যাপসুলগুলো একটির সাথে আরেকটি লেগে গেছে। যেহেতু এগুলো বাচ্চাদের খাওয়ানো হবে, সেহেতু আমরা ঝুঁকি নেইনি।”

তিনি বলেন, “আমরা মন্ত্রণালয় থেকে তিন-সদস্যের কমিটি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছি।”

মন্ত্রী বলেন, “আমাদের বিশে​ষজ্ঞরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ক্যাপসুলগুলো গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখবেন যে সেগুলোর মানে কোনো সমস্যা আছে কি না। সমস্যা থাকলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তাঁর মতে, সমস্যাটি সংরক্ষণ ব্যবস্থার ক্রটির কারণেও হতে পারে। তবে প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোন দেশের এবং কী নামের প্রতিষ্ঠান এই ক্যাপসুল এনেছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। ঢাকায় প্রথম আলোসহ একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভারতের একটি কোম্পানি এই ক্যাপসুল সরবরাহ করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭০, ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশে রাতকানা রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল। শুধু শিশু নয়, মায়েদের মধ্যেও রাতকানা রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল।

স্বাস্থ্য খাতের এই সমস্যা দূর করতে ১৯৯৪ সাল থেকে সারাদেশে বিনামূল্যে ছয়মাস থেকে পাঁচ বছরের সব শিশুকে বছরে দুইবার ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমানে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. একেএম শামসুজ্জামান বেনারকে বলেন, “ভিটামিন-এ ক্যাপসুল কর্মসূচি আমাদের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অন্যতম সফল কর্মসূচি। ১৯৮২ সালে রাতকানা রোগীর সংখ্যা ছিল ৩.৭৬ শতাংশ। এই কর্মসূচির কারণে সেই হার নেমে এসেছে প্রতি হাজারে চারজন।

তিনি বলেন, “ভিটামিন-এ শুধু রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে না, শরীরের যেসব অংশে আবরণ থাকে সেগুলো রক্ষা করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ খাওয়া হলে সব বয়সীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মানুষ সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষা পায়।”

ডা. শামসুজ্জামান বলেন, “যেহেতু মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সে কারণে সরকার টিকা খাওয়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। এটি ভালো সিদ্ধান্ত। তবে এই কর্মসূচি যেন কোনক্রমেই বন্ধ না হয়ে যায় অথবা বেশি দিনের জন্য স্থগিত না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”

তিনি বলেন, বিনামূল্যে পরিচালিত সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে গেলে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের অর্জনগুলো ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তাক হোসেন বেনারকে বলেন, “ভিটামিন-এ খাওয়ানোসহ সরকারিভাবে যেসব ওষুধ সরবরাহ করা হয় সেগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এগুলো বিমানবন্দর থেকে ছাড় করার আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মান পরীক্ষা করেন। তাঁরা ছাড়পত্র দিলে সেগুলো বিতরণের জন্য গ্রহণ করা হয়।”

তিনি বলেন, “সেদিক বিবেচনা করলে আমার মনে হয় ক্যাপসুলগুলোর সমস্যা থাকার কথা নয়। তবে অনেক সময় পুরানো চালানের ক্যাপসুল নতুন চালানের মধ্যে মিশে যেতে পারে। আবার অনেক সময় যে তাপমাত্রায় ক্যাপসুলগুলো সংরক্ষণ করার কথা সেই তাপমাত্রায় রাখা না হলে অথবা একবার ফ্রিজ থেকে বের করে আবার ফ্রিজে রাখা হলে ক্যাপসুগুলো একটার সাথে একটা লেগে যেতে পারে।”

মোস্তাক হোসেন বলেন, “ক্যাপসুলগুলো খাওয়ানোর সময় যদি দেখা যেত যে একটার সাথে আরেকটি লেগে গেছে তাহলে মানুষ এটাকে ভালোভাবে গ্রহণ করত না।”

তাঁর মতে, সরকারি স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রতি মানুষের অগাধ আস্থার কারণেই বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে অনেকগুলো অর্জন এসেছে। মানুষের এই আস্থা ধরে রাখা সরকারসহ সবার দায়িত্ব।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।