বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2017.02.13
বাংলাদেশ বিমান। ফাইল ফটো বাংলাদেশ বিমান। ফাইল ফটো
স্টার মেইল

বিমান চলাচলে যে কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টির ঘটনা প্রমাণ হলে মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তির বিধান করতে যাচ্ছে সরকার। গত ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণ করে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কঠোর শাস্তির বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে কিনা—সেই প্রশ্ন উঠেছে জোরেশোরে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বেনারকে বলেন, “ওটা ছিল মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা। দৃষ্টান্তটি সামনে ছিল, তবে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) দিক নির্দেশনা অনুযায়ী বেসামরিক বিমান পরিবহন অধ্যাদেশ ১৯৬০-এর হালনাগাদ করা হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা ওই বিমান জরুরি অবতরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনার ঝড় ওঠে। তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিমান থেকে নয়জন কর্মকর্তা–কর্মচারীকে বরখাস্ত করা ছাড়াও তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি ওই ঘটনা মানবসৃষ্ট বলে মত দিয়েছে। তবে এটা নাশকতা না অবহেলা তা নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

তবে ওই মামলার বিচার নতুন আইনে হবে কিনা, সেসম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি বিমান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা বিমান দুর্ঘটনায় পড়ার পরই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে পড়ে। ফলে নীতি নির্ধারক পর্যায়ের মতামতসাপেক্ষে আইনের খসড়ায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান যুক্ত করা হয়।

ওই দুর্ঘটনার সময় ‘বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ২০১৭’ এর খসড়া জাতীয় সংসদে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। এ লক্ষ্যে গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রীসভায় নীতিগত ও পরে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছিল ওই আইনটি। এমনকি আইন মন্ত্রণালয় ভেটিংও (আইনি মত দেওয়া) ​করেছিল।

ওই অবস্থা থেকে আইনটি ফেরত এনে কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার ফের মন্ত্রিসভায় আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া হয়, যা এখন জাতীয় সংসদে যাবে চূড়ান্ত হওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটালে মৃত্যুদণ্ডের বিধানসহ আইন চূড়ান্ত করা হয়। ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটালে মৃত্যুদণ্ডের বিধানসহ আইন চূড়ান্ত করা হয়। ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭।
ফোকাস বাংলা
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন সংশ্লিষ্ট আইন লঙ্ঘনের অপরাধের শাস্তি আরও কঠোর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ফ্লাইট পরিচালনায় কোনো প্রকার ইচ্ছাকৃত বাধা সৃষ্টির দায়ে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অনধিক পাঁচ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

আ​ইনের খসড়ায় এয়ার নেভিগেশন অর্ডার (এএনও) লঙ্ঘনের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং কমপক্ষে এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এমনকি সার্টিফিকেট অথবা লাইসেন্স জাল হলেও একই শাস্তির বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিমান চলাচলে ফ্লাইট পরিচালনায় লাইটিং অথবা সিগন্যাল ব্যবস্থায় কোনো বাধাগ্রস্ত অথবা ক্ষতি করার মতো যে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের অভিযোগে আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

খসড়া আইনে বিমানের ফ্লাইটে কোনো প্রকার বিপজ্জনক কিছু ব্যবহারের দায়ে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ৭ বছর এবং সর্বনিম্ন ৩ বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে আকাশসীমা লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধান ছিল না।

এসব সাজা অন্তর্ভুক্ত করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, নতুন আইনে বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) প্রযোজ্য নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।

তাঁর মতে, ওই নীতিমালার পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রস্তাবিত আইনে জেল–জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি জিএমজি এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ বেনারকে বলেন, কোনটি ভুল, কোনটি নাশকতা এবং কোনটি ইচ্ছাকৃত অপরাধ—এগুলো সুষ্ঠুভাবে চিহ্নিত করতে হবে। তিনি মনে করেন, ভুল হতে পারে কাজের পরিবেশ প্রতিকূলে থাকলে বা প্রশিক্ষণের অভাবে। সে ক্ষেত্রে এগুলো আগে দূর করতে হবে।

সিভিল অ্যাভিয়েশনে বিশেষজ্ঞ ওই কর্মকর্তা বলেন, আইন ও শাস্তির কারণে কেউ যাতে এই খাতে আসতে ও থাকতে নিরুৎ​সাহিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটাও জরুরি। কারণ এই সেবা খাতের অবস্থা ততটা ভালো নয়।

মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বিদেশিদের মত হচ্ছে, বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল আইনটি দুর্বল। এটা কঠোর করার পর এসব প্রশ্নের মুখোমুখি আর হতে হবে না।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।