ইরানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: বিপত্তির মুখে ঢাকা-রোম সরাসরি ফ্লাইট

কামরান রেজা চৌধুরী
2024.03.12
ঢাকা
ইরানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: বিপত্তির মুখে ঢাকা-রোম সরাসরি ফ্লাইট আকাশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। ২৩ মার্চ ২০২১।
[সুদীপ্ত সালাম/বেনারনিউজ]

মহান স্বাধীনতা দিবসে (২৬ মার্চ) পুনরায় ঢাকা-রোম সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতে এক মাস আগে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।  কিন্তু ফ্লাইট শুরুর আগেই দেখা দিয়েছে নতুন বিপত্তি।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান জানিয়েছে, ওভারফ্লাইং চার্জ পরিশোধ না করলে আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না বিমান।  অন্যদিকে, ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই অর্থ পরিশোধও করতে পারছে না বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইরানের আকাশ পথ ব্যবহার করা সম্ভব না হলে অন্য তিন দেশকে ওভারফ্লাইং চার্জ দিতে হবে।  সেই সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বাড়তি উড়তে হবে, তাতে জ্বালানি খরচও বেশি হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “ইরানের আকাশ পথ ব্যবহার না করলে টিকিটের খরচ বাড়বে। বাড়তি ব্যয় যাত্রীদের বহন করতে হবে। বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এর সঙ্গে সামরিক কোনো কিছুর সম্পর্ক নেই। এই অবস্থায় অর্থ পরিশোধে সমস্যা হওয়া দুঃখজনক।”

তিনি বলেন, “বিমান মূলত মার্কিন বোয়িং উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে। আমরা চাই, মার্কিন সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইরানকে অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করুক। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মার্কিন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।”

এই ব্যাপারে মন্তব্য জানতে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ও ইরানি দূতাবাসে পৃথক ইমেইল পাঠানো হলেও মঙ্গলবার  রাত নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

বিমান ১৯৮২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা-রোম ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর পরে বাণিজ্যিক ব্যর্থতার কারণে বন্ধ করে দিতে হয়।

নতুন করে ফ্লাইটটি মূলত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া এবং বসনিয়ার আকাশ অতিক্রম করে রোমে পৌঁছাবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

সরকারি হিসাবে, ইতালিতে দেড় লক্ষাধিক বাংলাদেশি বসবাস করেন। অন্যদিকে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাসিন্দাদের মতে, এই উপজেলার কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ ইতালি ও গ্রিসে রয়েছেন।

মাদারীপুরের বাসিন্দা আমীর হোসেনের দুই ভাই ইতালিতে থাকেন।  তাঁরা প্রায়ই বাংলাদেশে আসেন। তিনি মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “এখন ইতালি যেতে হলে দুবাই অথবা কাতার হয়ে যেতে হয়। ঢাকা থেকে সরাসরি রোমে যাওয়া গেলে যাত্রীদের সময় বাঁচবে, খরচও কমবে।”

সাধারণ শ্রেণিতে সব ধরনের করসহ ঢাকা-রোম রুটে একমুখী যাত্রায় সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার টাকার কিছু বেশি। বিজনেস ক্লাসে সর্বনিম্ন ভাড়া এক লাখ ৪৪ হাজার টাকার কিছু বেশি। সাধারণ শ্রেণিতে দ্বিমুখী যাত্রার ভাড়া এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিমানের নতুন উদ্যোগ অনুসারে, ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে প্রতি সোমবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ২টায় ঢাকা থেকে ফ্লাইট ছেড়ে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় রোমে পৌঁছানোর কথা।  এরপর পহেলা এপ্রিল থেকে সপ্তাহের একই দিনগুলোতে ঢাকা থেকে ফ্লাইট ভোররাত ৩টায় ছেড়ে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রোমে পৌঁছানোর কথা।  ফেরার ক্ষেত্রে রোম থেকে বিমানের ফ্লাইট সকাল পৌনে ১১টায় ছেড়ে স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১২টায় ঢাকায় আসার কথা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়াই ঢাকা-রোম সরাসরি বিমান সেবা শুরু করা হচ্ছে।

বেসামরিক বিমান ও পর্যটন বিষয়ক ম্যাগাজিন মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “ঢাকা-রোম সরাসরি ফ্লাইট চালু হচ্ছে ভালো কথা। কিন্তু শুধু রোমের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা করে কতদিন এই সেবা দেওয়া সম্ভব! যেসব বাংলাদেশি ইতালি থাকেন তাঁরা কি সবাই রোমে বসবাস করেন? যিনি মিলান থাকেন, তিনি কি রোমে গিয়ে আরেকটি ফ্লাইটের টিকিট কিনে উঠবেন? রোম থেকে ইতালির অন্যান্য শহরে যাওয়ার ফ্লাইট যেন সহজেই পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা না করে এই সেবা চালু রাখা যাবে বলে মনে হয় না।”

সপ্তাহের তিন দিনই রোমের পরিবর্তে মিলান বা ভেনিসে ফ্লাইট পরিচালনা করার পরামর্শ দেন ওয়াহিদুল আলম।

তিনি বলেন, “ইরানের ওপর দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি নতুন নয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও নতুন নয়। এগুলো বিবেচনায় না নিয়ে একটি তারিখ নির্ধারণ করে ফ্লাইট পরিচালনা করতে বিমান টিকিট বিক্রি শুরু করেছে, যা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি।”

ঢাকা-রোম ফ্লাইট কেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেটি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন মন্তব্য করে ওয়াহিদুল আলম বলেন, “সে সময় লোকসানের কারণে এই রুটে বিমানের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিকল্পনা মাফিক না এগোলে হয়তো কিছু দিন চলার পর এই সেবা আবারও বন্ধ হয়ে যাবে।”

উল্লেখ্য, তেহরানের ওপর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা অনেক আগে থেকেই বহাল আছে। দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। 

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও পরবর্তী সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে নিষেধাজ্ঞা আবার জোরদার করা হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।